‘দেশীয় ছোট প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:০৩ অপরাহ্ন
‘দেশীয় ছোট প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে’

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়  দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ছোট-বড় মাছ বিলুপ্তির পথে। সেই সাথে আশংকা করা হচ্ছে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এ এলাকায় এক সময় এসব মাছ সম্পূর্নভাবে বিলুপ্তি ঘটবে। ক্রমশই খাল বিল, পুকুর, নদ-নদীসহ মুক্ত জলাশয়গুলো মাছ শ‚ন্য হয়ে পড়েছে। হারিয়ে যাওয়া এসব মাছের স্বাদ ভুলে যাচ্ছে বাউফলের মানুষজন। এক দশক আগেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবায় এবং ফসলী ক্ষেতে প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। একশ্রেণীর মানুষ মাছ ধরাকে তাদের পেশা হিসেবে নিয়েছিল। কিন্তু যত্রতত্র মাছ আর পাওয়া না যাওয়ায় সে জেলেরা বর্তমানে তাদের পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। জানা গেছে, বর্তমানে আমাদের দেশে উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি মিঠা পানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৫৪ প্রজাতির মাছের অস্তিত্বই বিপন্ন। বিলুপ্ত হওয়া মাছের মধ্যে রয়েছে, ঢেলা, পাবদা, দাড়কানা, মোয়া, রয়না, গোরপে, তিন কাঁটা আইড়, তেলটুপি, গাড্ডু টাকি, ভেদা, মাগুড়, বড় শৈল প্রভৃতি। ইদানীং পুঁটি, জাতটাকি, তিতপুঁটি, টেংরা, শিং, বালিয়া, চান্দা, বাইম, টেংরা, চান্দা, কাকিলা, খৈইলসা, গজার মাছগুলোও হাটবাজারে তেমন চোঁখে পড়ে না। মাঝেমধ্যে পাওয়া গেলেও দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। নদী-নালা, খাল-বিল, গর্ত-ডোবা ইত্যাদি ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে যাওয়া, মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়া, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, ছোট বড় জলাশয় সেচে মাছ ধরা, ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ নিধনের কারণে অনেক প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। উপজেলার নাজিরপুর তাতেরকাঠী গ্রামের ৭০ বছর বয়সের বৃদ্ধ হারুন গাজী বলেন, কিশোর বয়স থেকেই মাছ ধরাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলাম। বিল থেকে মাছ ধরে হাটবাজারে বিক্রির মাধ্যমেই সংসার চলতো। এক যুগ ধরে আর মাছ ধরি না। তার মতে দেড় যুগের মধ্যে কমপক্ষে ১০-১২ প্রকারের দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাজারগুলোতে এ প্রজাতির মাছের আমদানি একেবারেই কমে গেছে।

উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে যাও কিছু মাছ আমদানি হয় তাও আবার চলে যায় বিত্তবানদের হাতে। সাধারণ মানুষের কপালে এসব মাছ আর জোটে না। দেশীয় প্রজাতির প্রায় সব মাছের বংশ বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এসব স্থান দখল করে নিয়েছে বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির কার্প জাতীয় চাষ করা মাছ। জেলার হাট বাজারগুলোতেই দেশীয় প্রজাতির মাছে ব্যাপক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। উপজেলার বৃঘত্তম কালাইয়া মাছ বাজারের বিভিন্ন মাছ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, বিগত এক যুগ আগেও দেশী প্রজাতির প্রাকৃতিক মাছের কোনো ঘাটতি ছিল না। এখন তো দেশীয় ছোট মাছ পাওয়াই যায় না। যাও অল্প কিছু মেলে, দাম অনেক বেশি। নাজিরপুর ছোটডালিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আখতার ফারুক জানান, এই মাছ ধরার বিভিন্ন প্রকারের জাল নিয়ন্ত্রন না হওয়ার কারনে এই মাছগুলো বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। একটা সময় মাছ খেতে খেতে বিমুখ হয়ে যেত গ্রামা লের মানুষ। আর এখন এসব প্রাকৃতিক ছোট ছোট মাছের দেখা মেলাই ভাড়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষন করছি। কাছিপাড়া গ্রামের শুকুর মিয়া বাড়ির আশপাশের খাল-বিল, ডোবা ও নদী থেকে সারা বছর মাছ ধরে সংসার চালাতেন। গত কয়েক বছর ধরে ওই মাছ পাচ্ছেন না। এতে তিনি পেশা বদল করে এখন রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা  উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: জসিম উদ্দিন জানান, পরিবেশ বিপর্যয়, জলাশয় ভরাট, নদী-নালা ভরাট, পনি শুণ্য, জনসংখ্যা বেড়ে যাওযায় মৎস্য আহরণের চাপ বেড়ে গেছে। অপরদিকে, সেচ দিয়ে মাছ মেরে ফেলা হয়। জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের প্রভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভাবিষ্যতে হয়তো দেশীয় প্রজাতির মাছ চিরতরে হারিয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব