প্রকাশ: ৪ মে ২০২৫, ১৭:৩১
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন স্পষ্টভাবে বলেছেন, অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে না। তিনি এ মন্তব্য করেন রোববার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে, যেখানে আলোচনার বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন : আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ’।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা তখনই সম্ভব হবে যখন তাদের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা মিলবে। বর্তমান মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি, সামরিক জান্তার দমন-পীড়ন এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথে বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।
তৌহিদ হোসেন জানান, রোহিঙ্গাদের ফেরানোর ক্ষেত্রে দুটি মূল দিক রয়েছে—একটি হলো মানবাধিকার, অপরটি নিরাপত্তা। এই দুটি শর্ত পূরণ না হলে রোহিঙ্গারা সেই ভূখণ্ডে ফিরতে রাজি হবে না, যেখান থেকে তারা নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসেছিল। তিনি প্রশ্ন করেন, “আমরা কি তাদের আবার সেই নির্যাতনের আগুনে ঠেলে দেব?”
মিয়ানমারের সঙ্গে এককভাবে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার ভাষায়, বিগত বছরগুলোতে যেসব দ্বিপক্ষীয় আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা একটিও কার্যকর ফল আনতে পারেনি। এমনকি একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে অবশ্যই বাস্তব রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে হবে এবং তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে হবে। এই পরিবর্তন ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান দূরাশা। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সংকটকে অগ্রাধিকার দেওয়া অব্যাহত রাখতে হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মনে করেন, একটি স্পষ্ট ও কাঠামোবদ্ধ রোডম্যাপ প্রণয়ন জরুরি যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ দেখাবে। একইসঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, মিয়ানমারে কখনো পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র ছিল না, এমনকি অং সান সু চির নেতৃত্বেও তা ছিল আধা-সামরিক নিয়ন্ত্রিত।
শেষে তিনি বলেন, এখন মিয়ানমারে তিনটি বড় পক্ষ রয়েছে—সামরিক জান্তা, আরাকান আর্মি এবং জাতীয় ঐক্য সরকার। এদের প্রত্যেককেই আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা আরাকান আর্মিকে বাদ দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।