কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম ‘রিবিল্ডিং বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি আফটার শেখ হাসিনা’। তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে বিরোধী মত দমন, গুম, খুন ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাতে শেখ হাসিনার সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসন এবং ফ্যাসিবাদী কৌশলগুলির সমালোচনা করা হয়েছে।
এছাড়া, ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের অবনতি এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রের অবক্ষয় তুলে ধরে তথ্যচিত্রটি। এতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা তার শাসনামলে পুলিশ, র্যাবসহ নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে বিরোধী নেতাদের ধরপকড় ও নির্যাতন চালিয়েছেন। বিশেষ করে, বিএনপির নেতাদেরকে বিনাবিচারে আটক করা হয়েছে, এবং ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিষয়টি সামনে আনা হয়।
এছাড়া, তথ্যচিত্রে জানানো হয়, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যখন চরম অস্থিরতায় ছিল, তখন শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটানোর পর, দেশের পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের কার্যক্রম শুরু হয়।
তথ্যচিত্রে আরও উঠে এসেছে, ছাত্র আন্দোলনের ফলস্বরূপ, রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তথ্যচিত্রে জানানো হয়, ইউনূস প্রথমে এটি গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক ছিলেন, তবে পরবর্তীতে ছাত্রদের অনুরোধে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনার শাসনকালে দেশের নানা অরাজকতা এবং দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে তথ্যচিত্রে উল্লেখ করা হয় যে, তার শাসনামলে অনেক মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। এর মধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের পরিমাণ অত্যন্ত বাড়িয়েছে, যা তাকে আন্তর্জাতিক সংবাদে সামনে নিয়ে আসে।
শেখ হাসিনার শাসন শেষ হওয়ার পর, অন্তর্বর্তী সরকার অনেক সাফল্য অর্জন করে, বিশেষ করে প্রশাসনিক সংস্কার এবং ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি রোধে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ও ছাত্র আন্দোলনের সহানুভূতিশীল সেনাবাহিনীর ভূমিকা চিত্রিত করা হয়েছে আল জাজিরার তথ্যচিত্রে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের সূচনা হিসেবে পরিগণিত হয়।