ফরিদপুরের কানাইপুর ইউনিয়নের রণকাইল গ্রামের বাসিন্দা সাইদ খান (৩৫) গত ২৯ মার্চ ঈদের জন্য জুতা কিনতে যান কানাইপুর বাজারের জুতাপট্টি এলাকার রহমত সু-স্টোরে। কিন্তু পছন্দ না হওয়ায় রাত আটটার দিকে জুতা বদলাতে গেলে দোকানদার রহমতের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দোকানদার রহমত ক্ষিপ্ত হয়ে সাইদকে মারধর করেন।
এ ঘটনার পরপরই সাইদ খান তার লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। এরই মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ। সংঘর্ষে দুইপক্ষের কয়েকজন আহত হন। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে খবর দিলে দ্রুত কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে আহত হন অন্তত সাতজন।
এছাড়া একই রাতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায়ও ঘটে আরেকটি সংঘর্ষের ঘটনা। এখানে একটি দোকানের সামনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রাখা নিয়ে জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মহসিন মিয়া (মধু) এবং শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আনার মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারামারি। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৩৯ জন আহত হন। খবর পেয়ে ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার জানান, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে জরুরি সেবার জন্য ফোনকলের সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। এবার ৯ দিনব্যাপী ছুটিতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন এসেছে দুই লাখ ৪০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার কল ছিল ভুয়া বা সেবাযোগ্য নয়।
তিনি আরও জানান, সর্বাধিক ফোনকল এসেছিল মারামারি-সংঘর্ষ সংক্রান্ত। এছাড়া শব্দ দূষণ, অগ্নিকাণ্ড, চিকিৎসাসেবা, আটকে রাখা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নারী নির্যাতন, সড়ক দুর্ঘটনা, চুরি এবং জমি দখল সংক্রান্ত নানা অভিযোগ নিয়ে ফোন করেছিলেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।
৯৯৯ নম্বরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঈদের ছুটির নয় দিনে শুধু মারামারি সংক্রান্ত কল এসেছে ৩৭৬৮টি। শব্দ দূষণ নিয়ে কল এসেছে ১২৩৩টি, অগ্নিকাণ্ডে ১২২২টি, জরুরি চিকিৎসাসেবায় ৯৪৪টি, অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে ৯০৩টি, সন্ত্রাস রোধে ৭৭৮টি, নারী নির্যাতনে ৭৩৭টি, দুর্ঘটনায় ৫৭১টি, চুরিতে ৫৩৩টি এবং জমি দখল সংক্রান্ত কল এসেছে ৫০০টি।
৯৯৯ নম্বরে কলের দৈনিক পরিসংখ্যানও প্রকাশ করা হয়েছে। ২৮ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন ২৫ থেকে ২৮ হাজারের মতো কল এসেছে। এর মধ্যে ছুটির শেষ দিন ৫ এপ্রিল কল এসেছে সর্বোচ্চ ২৭ হাজার ৯৯১টি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৯৯৯ নম্বরে কল করে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে মানুষ খুব দ্রুত পুলিশের সেবা পেয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষের মধ্যে এই সেবার ওপর আস্থা ও নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে।