বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে এখনও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সরকারি সেবার মান, ইউটিলিটি সেবার অপ্রতুলতা, দুর্নীতি এবং সরকারি সংস্থার সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের বোঝাপড়ায় ঘাটতি এসব চ্যালেঞ্জের বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নিতে আসা বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা এসব অভিজ্ঞতার কথা সরাসরি জানিয়েছেন সরকারের দায়িত্বশীলদের। তারা জানিয়েছেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নানা ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস পেলেও বাস্তব ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তা পান না।
বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরে দেখার পর বিনিয়োগকারীরা আরও কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। তারা জানতে চেয়েছেন, এসব সমস্যার সমাধান সরকার কীভাবে করবে এবং বিনিয়োগ করলে তারা কী ধরনের সুবিধা পেতে পারেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানিয়েছেন, সফররত বিনিয়োগকারীদের বেশ ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করেছেন তিনি। বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেড, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং নারায়ণগঞ্জের জাপানিজ ইকোনমিক জোন পরিদর্শন করেছেন।
এসব অঞ্চলের উন্নয়ন দেখে বিনিয়োগকারীরা সন্তুষ্ট হলেও পুরনো অভিজ্ঞতার কারণে অনেকেই এখনও দ্বিধায় আছেন। কোরিয়ান একাধিক বিনিয়োগকারী দল জানিয়েছে, আগেও তারা এসেছিলেন, কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার কারণে বিনিয়োগ করেননি।
বিশেষ করে চীনের বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি দল অভিযোগ করেছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও নিচের স্তরের কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেন না। এমনকি একটি কোম্পানি তিন বছরের বেশি সময় ধরে লাইসেন্স না পেয়ে বিনিয়োগ চালু করতে পারেনি।
বিডা চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এসব সমস্যার পুরোপুরি সমাধান সম্ভব না হলেও ২০টি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করে তা নিরসনে কাজ চলছে। চলতি বছরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিনিয়োগ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি জানান, এই সম্মেলন থেকে বিশাল অংকের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি নেওয়ার চেষ্টা নয় বরং বিদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করাই মূল লক্ষ্য।
বিনিয়োগকারীরা আরও চেয়েছেন, বিনিয়োগের নীতিমালা যেন স্থায়ী থাকে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো হয় এবং গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সেবা সহজে পাওয়া যায়। তাদের মতে, এসব সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ অনেক বেশি বাড়বে।