চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার দিং ঝুঝিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকটি বৃহস্পতিবার সকালে বোয়াও স্টেট গেস্ট হাউসে অনুষ্ঠিত হয়। এটি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোর একটি ছিল। বৈঠকে তারা দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন চীন এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান চেন হুয়াইউ।
এর আগে গতকাল চার দিনের সফরে চীনে যান ড. ইউনূস। তিনি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিতে দেশটিতে গেছেন। এই সফরের অংশ হিসেবে তিনি বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। আজ সম্মেলনের উদ্বোধনী প্লেনারি সেশনে তিনি বক্তব্য রাখবেন। এতে তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি, উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৈঠকের আলোচনায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে ব্যাংকিং লেনদেন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর উভয় পক্ষ পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। চীন এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান চেন হুয়াইউর সঙ্গে বৈঠকেও অর্থনৈতিক বিষয়ক আলোচনা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব নীতির ফলে চীনের জন্য এখানে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে তা উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে। তিনি চীনের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশেও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান।
বিএফএর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের অধিবেশন শেষে দুপুর ২টায় খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক কু দোংইউর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ড. ইউনূস। খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষিখাতে উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তারা আলোচনা করবেন। বাংলাদেশ কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে চীনের সহযোগিতা চেয়েছে।
একই দিন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গেও একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন ড. ইউনূস। বৈঠকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ ও দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া বৈঠকে বৈশ্বিক শান্তি ও মানবাধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় উঠে আসতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন। দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রসার এবং জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। বিশেষ করে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি আমদানি, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
চীন সফরে ড. ইউনূসের এসব বৈঠক বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে অন্যান্য বৈঠকগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।