১৫০ কোটি টাকা অনুদান পাচ্ছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ১৫ হাজার ব্যক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: শনিবার ১৮ই জানুয়ারী ২০২৫ ০৭:৫১ অপরাহ্ন
১৫০ কোটি টাকা অনুদান পাচ্ছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ১৫ হাজার ব্যক্তি

চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে ১৫০ কোটি টাকা অনুদান পাচ্ছেন ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ১৫ হাজার ছাত্র-জনতা। সরকার ইতোমধ্যেই এই অর্থ ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। 


মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট থেকে ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত’ থেকে এই অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, ১৫০ কোটি টাকার এই অনুদান শহীদ পরিবারের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রদান করা হবে। বিশেষভাবে আহতদের জন্য অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ভিন্ন ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা শহীদ পরিবারের প্রতি সরকারের দায়িত্ব ও সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।


এই অনুদান শহীদ পরিবারের জন্য যেমন সহায়তা হিসেবে ব্যবহৃত হবে, তেমনি আহতদের চিকিৎসা বাবদও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এক হাজার ব্যক্তি যারা ক্যাটাগরি ‘এ’ তে আছেন, তারা প্রত্যেকে দুই লাখ টাকা করে পাবেন, যার মোট পরিমাণ ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া, ক্যাটাগরি ‘বি’ তে থাকা তিন হাজার জন, প্রত্যেকে এক লাখ টাকা করে পাবেন, এবং এই খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩০ কোটি টাকা। 


অপরদিকে, ক্যাটাগরি ‘সি’ তে থাকা ৪ হাজার আহতকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে, যা মোট ৪০ কোটি টাকার সমান। আর ক্যাটাগরি ‘ডি’ তে থাকা সাত হাজার আহত ব্যক্তি প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকা করে পাবেন, এই খাতে বরাদ্দ ৩৫ কোটি টাকা। 


তাছাড়া, আহতদের চিকিৎসার জন্য দেশে-বিদেশে পরামর্শ সেবার জন্য ২৫ কোটি টাকার একটি বিশেষ বরাদ্দও রাখা হয়েছে। এটি আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে সহায়ক হবে। 


সরকার এই অর্থ ছাড়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে, যাতে এই টাকা যথাযথভাবে ব্যয় হয়। চিঠির মাধ্যমে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বিলের মাধ্যমে অর্থ বা চেক উত্তোলন করতে হবে এবং সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এই টাকা অবমুক্ত করা হবে। ব্যাংকের রমনা কর্পোরেট শাখায় এই অর্থ জমা হবে এবং তারপর শহীদ পরিবার এবং আহতদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। 


এছাড়া, শহীদ পরিবারের জন্য একটি বিশেষ সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা করে মাসিক মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র হস্তান্তর করা হবে। এই সঞ্চয়পত্র মেয়াদপূর্তিতে নগদায়নযোগ্য হবে, যা শহীদ পরিবারের দীর্ঘমেয়াদী সহায়তার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। 


সরকারি চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে, এই অর্থ ব্যয়ে প্রচলিত সব আর্থিক বিধি-বিধান এবং নিয়মাবলি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া, শহীদ পরিবারের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা অনুদান বাবদ বরাদ্দ করা অর্থের ব্যয় স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হবে, এজন্য নীতিমালা জারি করার কথাও বলা হয়েছে। 


এই ঘোষণা সাধারণ জনগণের মধ্যে একটি আশা ও আস্থা সৃষ্টির পাশাপাশি, আহতদের এবং শহীদ পরিবারের প্রতি সরকারের আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটিয়েছে। তবে, এই অনুদানের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে এবং কতটুকু দ্রুত তা সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করবে এই অর্থের সঠিক প্রয়োগ। 


জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা এবং তাদের পরিবার এই সহায়তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, যা তাদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ করতে সহায়তা করবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক চেতনার অঙ্গীকার হিসেবে এই অনুদান সরকারের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। 


তবে, এই বরাদ্দের পরিমাণের সঙ্গে বাস্তবতার মেলবন্ধন কতটুকু হবে, তা দেখার বিষয়। সরকারের পক্ষ থেকে যে দ্রুততার সঙ্গে এই অর্থ বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে, তাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।