ব্যাংকের শাখার ভল্ট থেকে উধাও হচ্ছে টাকা, গোপন করা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। অনৈতিকভাবে নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে দুরবস্থায় পড়ছে ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নিলেও কেন এ ধরণের অনিয়মের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে এ বিষয়ে বিরক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব বিষয় যাতে প্রকাশিত না হয় সেজন্য সংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র জানায়, সংবাদ মাধ্যমে ব্যাংক সংক্রান্ত কোনো অনিয়মের তথ্য প্রকাশ হলেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ বা শোকজ করা হচ্ছে। নানাভাবে মানসিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে বদলি ও চাকরি থেকে বহিস্কারের হুমকিও। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্মীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে সাংবাদিকদের প্রবেশে সময়সীমা বেধে দেন। এর প্রতিবাদে সাংবাদিকরা গভর্নরের একটি প্রোগ্রাম বর্জন করে। পরে সময়সীমা প্রত্যাহার করা হয়। সম্প্রতি নতুন করে কয়েকটি বিভাগে বিনা নোটিশে সাংবাদিকদের প্রবেশে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকজন কর্মকর্তাকে শোকজ নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে অন্য বিভাগের কর্মকর্তারাও এখন সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। এতে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমে যাওয়া, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। সূত্র জানায়, ওই সব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কঠোর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। উল্টো সংশ্লিস্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের চাপের মধ্যে রাখতে ব্যস্ত হয়েছে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে দিনই সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে ওইদনই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীদের নানা চাপে ফেলা বা শোকজ করা হচ্ছে।
ব্যাংক পরিদর্শন, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপরভিশন, ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারী ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এবং অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের যুগ্ম পরিচালক থেকে শুরু করে নির্বাহী পরিচালক পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১০ জন কর্মকর্তাকে সম্প্রতি শোকজ করা হয়েছে। কেন সাংবাদিকদের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারে কাছে হোয়াসঅ্যাপে বক্তব্য চাওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকে আসছে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে নিউজ করছেন। তবে এ কারণে কোনো কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে- এমন কোনো বিষয় আমার জানা নেই।মর্গে মায়ের লাশ রেখেই পরীক্ষার হলে মেয়ে
ইনিউজ
নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের কালাই গোবিন্দপুরের বাসিন্দা দিনা বেগমের মরদেহ গতকাল শুক্রবার উদ্ধার করেছেন পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। দিনার মরদেহ বর্তমানে নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে। ভুক্তভোগী পরিবারে চলছে শোকের মাতম আর আহাজারি।
ওই নারীর বড় মেয়ে নাজিফা আক্তার এ বছর নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। এর মধ্যেই আজও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন নাজিফা। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সাটিরপাড়া কেকে ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে তিনি গণিত পরীক্ষায় অংশ নেন। এদিন ছিল এসএসসির লিখিত সর্বশেষ পরীক্ষা।
নরসিংদী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার বলেন, 'খবরটি শুনে আমি পরীক্ষার কেন্দ্রে ছুটে গেছি, মানসিকভাবে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আজকেই এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ। একটা পরীক্ষায় না বসলে তার চূড়ান্তে রেজাল্টে ফেল দেখাবে। তাই আজ পরীক্ষাটা তার জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।'
নাজিফার নানা কাজী ওমর ফারুক বলেন, 'আমার নাতনি অত্যন্ত মেধাবী। সবগুলো পরীক্ষা ভালো দিয়েছে। আজকেও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। এ পরিস্থিতিতে আমরা বুঝিয়ে তাকে পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছি। আমি নিজে কেন্দ্রে নিয়ে গেছি, আবার নিয়ে এসেছি।'
নাজিফা বলেন, 'আমার মাকে হত্যায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এর মধ্যেই পরীক্ষায় অংশ নেওয়াটা খুবই কঠিন ছিল। সবাই আমাকে মানসিক সাপোর্ট দিয়েছেন।'
নিহত দিনার মা রিনা বেগম জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর আলোকবালী ইউনিয়নে। ১৮ বছর আগে নজরপুর ইউনিয়নের বুদিয়ামারা গ্রামের কালাইগোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে আরমান গাজীর সঙ্গে দিনার বিয়ে হয়। তাদের ২ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে। সন্তানদের মধ্যে নাজিফা সবার বড়। সম্প্রতি আরমান গাজী ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আরমান ও দিনার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ওই রাতেই আরমান দিনাকে হত্যা করে পালিয়ে যান।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লোপা চৌধুরী বলেন, 'শুক্রবারে সাধারণত চিকিৎসকরা ছুটিতে থাকেন। গতকাল এক নারীর মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। আজকে ময়নাতদন্ত করা হবে।'
নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, 'স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি পুকুর থেকে দিনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যার ঘটনাটি সম্ভবত রাতে ঘটেছে। দিনার স্বামীসহ তার পরিবারের সবাই বর্তমানে পলাতক। ভুক্তভোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আমরা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।'
সূত্র: এই বেলা
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।