বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আবারও শুরু হচ্ছে অভিযান। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে এ অভিযানে নামবে। বিআইডব্লিউটিএর এবারের উচ্ছেদ কার্যক্রমের প্রথম দিনই রাজধানীর পশ্চিম হাজারীবাগে হাইক্কার খালের কাছে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের সংযোগস্থলে অবৈধভাবে নির্মিত বহুল আলোচিত ১০ তলা ভবনটি ভেঙে ফেলার কর্মসূচিও রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ সূত্র আরও জানিয়েছে, এবারের অভিযান চলবে দুই পর্যায়ে মোট ছয় দিন। প্রথম পর্যায়ে ৫ থেকে ৭ মার্চ তিন দিন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২ থেকে ১৪ মার্চ আরও তিন দিন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পরিচালিত হবে এই উচ্ছেদ কার্যক্রম। তবে প্রয়োজনবোধে অভিযানের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে বলেও জানা গেছে। জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, '৫ মার্চ থেকে আবারও উচ্ছেদ অভিযান শুরু করব আমরা।
এই অভিযানকালে পশ্চিম হাজারীবাগের ১০ তলা ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে। এটা প্রথম দিনের কর্মসূচিতে আছে। তবে বিষয়টি আসলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। কেননা, বহুতল এই ভবন ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সহযোগিতা চেয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে এর আগেই রাজউককে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এখন রাজউক যদি ওই সহযোগিতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলেই পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে আমাদের পক্ষে।' সূত্রমতে, এর আগের দফায় উচ্ছেদ অভিযানকালে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তুরাগতীরের ১০ তলা ওই ভবনটি ভাঙতে গিয়েও ব্যর্থ হয় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। সে সময় ভবনটি নদীর তীর দখল করে নির্মিত হয়নি এবং 'সম্পূর্ণ বৈধ' দাবি করে এর মালিকপক্ষ বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানসহ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের কিছু কাগজপত্র দেখান। পরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএর অনুরোধে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসে কাগজপত্র ও ভবনটি নির্মাণের সার্বিক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তিনি জানান, ভবনটির নকশাসহ নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের কোনোরকম অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
এরপর ভবনটি সরিয়ে ফেলার জন্য মালিকপক্ষকে ১৫ দিনের সময়ও বেঁধে দেয় রাজউক। অন্যথায় রাজউক থেকেই অভিযান চালিয়ে ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে বলেও জানানো হয়। এ অবস্থায় ভবনটি ভাঙার মতো যন্ত্রপাতি বিআইডব্লিউটিএর কাছে না থাকায় রাজউকের সহায়তা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা। সে অনুযায়ী নতুন করে শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানের উচ্ছেদের তালিকায় আলোচিত ১০ তলা ভবনটিও রয়েছে। এদিকে, ১০ তলা এই ভবন রক্ষার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল জোরালো তৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য তারা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং রাজউক কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। একই সঙ্গে তারা বলে বেড়াচ্ছেন, 'ভবনটি নদীর জায়গায় নির্মিত হয়নি, তাই বিআইডব্লিউটিএর এ ভবন ভাঙার এখতিয়ার নেই।' তবে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী, নৌ সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান- তিনজনই নদীতীরের যে কোনো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ক্ষেত্রে 'জিরো টলারেন্স' অবস্থানে থাকায় স্বার্থান্বেষী মহল ভবনটি শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারবে না বলেই দাবি করেছেন বিআইডব্লিউটিএর একাধিক কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি সংগঠন 'নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি'র সভাপতি হাজি মোহাম্মদ শহীদ মিয়া বলেছেন, রাজউকের অনুমোদিত নকশা ছাড়া ভবনটি যেখানে গড়ে তোলা হয়েছে, সে জায়গার মালিক যে সংস্থাই হোক না কেন, ভবনটি অবৈধ। তাই ভবনটি নদীর জায়গায় নির্মিত না-ও হয়ে থাকে, তা হলেও তো ওই ১০ তলা ভবন এখনই ভেঙে ফেলতে হবে। পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশের (জিসিবি) সভাপতি নূরুর রহমান সেলিম বলেন, যেহেতু রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন, ভবনটির কোনো নকশা তারা অনুমোদন দেননি, সেহেতু ভবনটি সম্পূর্ণ অবৈধ। সে কারণে বিআইডব্লিউটিএ কিংবা রাজউক- যার মাধ্যমেই হোক, অবৈধ ভবনটি ভেঙে ফেলার দাবিই তারা করছেন।
এর আগে ২৯ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার পর্যায়ে মোট ১২ দিন বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলেছিল। সে সময় বছিলা এলাকায় তুরাগ নদের পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা 'আমিন-মোমিন হাউজিং লিমিটেড' নামে হাউজিং প্রকল্প সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও এক হাজার ৭৪১টি ছোট-বড় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উদ্ধার করা হয়েছিল প্রায় ২৪ একর তীরভূমি। এই সময়কালে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের দায়ে বিআইডব্লিউটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে একজনের তিন মাসের কারাদণ্ডসহ কয়েকজনের কাছ থেকে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।