রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে নতুন বিপদে ঠেলে দিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বুধবার ২৭শে জুলাই ২০২২ ০৩:১৮ অপরাহ্ন
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে নতুন বিপদে ঠেলে দিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

আমরা সবাই কোভিড-১৯ মহামারিতে বিপর্যস্ত ছিলাম, সে সময় রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে নতুন করে বিপদে ঠেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বুধবার (২৭ জুলাই) সকালে ঢাকায় অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক জোট ডি-৮ এর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন এবং ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ২০তম অধিবেশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।এদিন রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।শেখ হাসিনা বলেন, সংঘাত এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা খাদ্য, সার, শক্তি ও বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত করেছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যুদ্ধের প্রভাব সবচেয়ে বেশি বহন করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অধিকাংশ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলের উচিত সাহসের সঙ্গে এই মানবিক সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসা।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সংঘাত, খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্ব কঠিন সময় অতিক্রম করছে।


‘কাজেই, শক্তিশালী বহুপাক্ষিক সহযোগিতার প্রয়োজন এবং বৈশ্বিক সংহতি-এই লক্ষ্যে আগের চেয়ে আরও বেশি মনোযোগের দাবি রাখে’, বলেন তিনি।শেখ হাসিনা বলেন, ডি-৮ দেশ ছয়টি বঞ্চিত এলাকায় সহযোগিতা করছে।প্রধানমন্ত্রী ডি-৮ নেতাদের বিবেচনায় নেওয়ার জন্য পাঁচটি প্রস্তাব রাখেন। তিনি বলেন,‘এটির আগামী দশকের জন্য কিছু নির্দিষ্ট ফোকাস ক্ষেত্র তৈরি করা উচিত।’


প্রথম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিটিএ বাস্তবায়ন একটি সফল ডি-৮ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান কারণ দেশগুলোর বড় দেশীয় বাজার এবং একটি সম্মিলিত বাজার রয়েছে তা-ও বিবেচনায় নিতে হবে।তিনি বলেন, ‘আন্তঃ ডি-৮ বাণিজ্য আমাদের ব্যবসার সম্ভাবনা এবং সুযোগগুলোকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে। আগামী দশকে ১২৯ বিলিয়ন ডলার থেকে আন্তঃ ডি-৮ বাণিজ্য দ্বিগুণ করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত’।


দ্বিতীয়ত প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সদস্য দেশগুলোর বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জায়গা দিতে প্রস্তুত। আমরা যদি এখনই প্রক্রিয়া শুরু করি, তাহলে আগামী দশকের মধ্যে আমাদের একটি শক্তিশালী ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে।’তৃতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, আইসিটি এমন একটি ক্ষেত্র যার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ডি-৮ দেশের যুবকদের শক্তিশালী কর্মশক্তিতে পরিণত করা যেতে পারে।


তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ ৪০ বছরের নিচে এবং আমাদের সাড়ে ৬ লাখ নিবন্ধিত আইটি ফ্রিল্যান্সার রয়েছে।সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই বিশাল জনশক্তিকে আমরা আইটি ভিত্তিক শিল্প তৈরি করতে এবং তরুণদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারি।’চতুর্থত তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ডি-৮-এর বৈচিত্র্যময় কৃষি উৎপাদনে মনোনিবেশ করা উচিত।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ তার সেরা অনুশীলন এবং অভিজ্ঞতা অন্যান্য ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত। আগামী দশকের মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য আমাদের কৃষি উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়া উচিত’।পঞ্চম এবং চূড়ান্ত প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে শক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প শক্তির উৎসগুলোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।


‘আমি প্রস্তাব করি যে ডি-৮ বিকল্প শক্তিতে দক্ষতা আছে এমন অন্যান্য দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করে সক্ষমতা বিকাশের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে’, তিনি যোগ করেন।অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া এবং তুরস্কের মত অন্তর্ভুক্ত ডি-৮ দেশগুলো অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করছে শুনে তিনি আনন্দিত।


তিনি আরও বলেন, ‘এটি আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সাহায্য করবে। বাধাগুলিকে উদারীকরণ করবে এবং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে উদ্দীপিত করবে।’১৯৯৭ সালের ১৫ জুন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ইস্তাম্বুল ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ডি-৮ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করা হয়েছিল।


অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ডি-৮ মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ইসিয়াকা আব্দুল কাদির ইমাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং ডি-৮ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডি-৮সিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বক্তব্য রাখেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।