প্রকাশ: ৫ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:১৬
হাজী সেলিম পুত্র ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযানে যা পাওয়া গেছে তাই র্যাব মামলায় দেখিয়েছে এবং সেভাবেই মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ তাদের তদন্তে যা পেয়েছে তারা তাই দাখিল করেছে।বর্তমানে ইরফান সেলিমের মামলাটি আদালতে বিচারাধীন, সেটি আদালত বুঝবে। আদালতের বিষয় নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
মঙ্গলবার (০৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন র্যাব ডিজি।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে র্যাব সেবা সপ্তাহে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করেছে র্যাব।
অনুষ্ঠানে ইরফান সেলিমের মামলা প্রসঙ্গে র্যাব ডিজি বলেন, আমাদের অভিযান সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালনা করেছি। অভিযানে যে সব জিনিস আমরা পেয়েছি, তার ভিত্তিতে আমরা মামলা করেছি। এর পরে ঘটনাস্থলে যা পেয়েছি তা তদন্ত করে মামলা করেছি।তিনি আরও বলেন, পরে পুলিশ তদন্ত করে যা পেয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এইটা এখন আদালতের বিচারিক বিষয়। বিচারিক বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ইরফানের বাসায় আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে যে সব মালামাল পাওয়া যায় বিশেষ করে ওয়াকিটকি— এসবের ভিত্তিতে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন। সেগুলো লিপিবদ্ধ করে আমরা থানায় মামলা করি।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা যে প্রতিবেদন দিয়েছেন সে বিষয়ে আমরা অবহিত নই। তিনি তার বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে যা পেয়েছেন তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কী আছে সেটা আমরা পেলে এ বিষয়ে পরবর্তীতে জানাতে পারব।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে ইফরান সেলমিকে দায়মুক্তি দেওয়ায় র্যাবের অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয় কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, র্যাব যে অভিযানটি পরিচালনা করেছিল সে সময় বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া অভিযানে যেসব আলামত পাওয়া গিয়েছিল তার ভিত্তিতে মামলাগুলো করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা যেসব বিষয় বিবেচনা করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, এ বিষয়ে র্যাব অবহিত নয়।তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব নারাজি দেবে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে আশিক বিল্লাহ বলেন, পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমাদের হাতে আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন নাকি র্যাবের অভিযান, জনগণ কোনটাকে বিশ্বাস করবে এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, র্যাব বাংলাদেশ পুলিশেরই একটি বিশেষায়িত বাহিনী। বাংলাদেশ পুলিশের যেসব শাখা আছে তার মধ্যে র্যাব অন্যতম।
এ রকম একটি বাস্তবতায় আমরা অভিযানে যেসব আলামত ও মালামাল পেয়েছি সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। র্যাব সব অভিযানে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে যেসব আলামত পাওয়া যায় তা এজাহারে উল্লেখ করে।
যে সময় ঘটনা ঘটে তার বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে মামলা করা হয়। সুতরাং র্যাবের সকল কার্যক্রম এক ধরনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে। এ বাস্তবতায় র্যাব নিরপেক্ষ ও চাপমুক্তভাবে অভিযান পরিচালনা করে।পুলিশের তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ কিনা জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, পুলিশের তদন্তের বিষয়ে র্যাব মনে করে পুলিশের যারা তদন্ত করেছেন তারা এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারবেন।
সোমবার (৪ জানুয়ারি) ডিএমপির লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কুদরত-ই খুদা বলেন, ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। প্রতিবেদনে তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে ইমরান সেলিমের কাছে কোনো অস্ত্র ও মাদক ছিল না। তার সহযোগী জাহিদের কাছ থেকে এই অস্ত্র ও মাদক পাওয়া গেছে। তাই প্রতিবেদনে তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।গত ২৭ অক্টোবর রাতে ডিএমপির চকবাজার থানায় দায়ের হওয়া এই দুটি মামলার বাদী ছিল র্যাব। মামলা হওয়ার দুই মাস পরে পুলিশ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ অক্টোবর ইরফান সেলিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার একটি মামলা হয়। নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার আসামিরা হলেন— ইরফান সেলিম, তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদ, হাজি সেলিমের মদিনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দীপু এবং গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত আরও দুই তিন জন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২৫ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওয়াসিফ আহমদের মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় হাজি সেলিমের গাড়ি। ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে পেছন পেছন এলে কলাবাগানের ট্রাফিক সিগন্যালে হাজি সেলিমের গাড়ি থেকে দুই-তিন জন ব্যক্তি নেমে ওয়াসিফ আহমদ খানকে ফুটপাতে ফেলে এলোপাথারি মারধর করেন।
পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে গালাগাল করেন ও হুমকি দেন। পরে ট্রাফিক পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। পথচারীদের ধারণ করা এই দৃশ্য ভাইরাল হয়ে যায়। পুলিশ হাজী সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার ও গাড়ি জব্দ করে।
পরে ২৬ অক্টোবর মামলা দায়েরের পর সেদিন দুপুরে র্যাব পুরান ঢাকায় চকবাজারে হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালায়। র্যাব হাজী সেলিমের ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে হেফাজতে নেয়। বাসায় অবৈধভাবে মদ ও ওয়াকিটকি রাখার দায়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের দুই জনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন। পরে মাদক ও অস্ত্র আইনে তাদের বিরুদ্ধে দুটি করে মোট চারটি মামলা দায়ের করে র্যাব।