অধরা শব্দটি দিয়ে যদি একটা প্রবন্ধ লিখতাম,তবে শৈশবের পূরণ না হওয়া শখগুলোই সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠত। পূণর্জন্মে খুব একটা বিশ্বস্ত না হলেও, করোনার কল্যাণে যেন,আরেকটা শৈশব ফিরে পেলাম। নজরুলভক্ত হয়েও নজরুলের মতো দুরন্তপনার তকমা আমার শৈশবকালের গল্পের অলঙ্কার বনে যায় নি।আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তরবঙ্গের দারিদ্রকবলিত জেলা কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার তিস্তা ও বুড়িতিস্তার কোল ঘেসে থাকা একটি গ্রামে। বাবা শিক্ষক বলে, কড়া শাসন আর বই-খাতার সাথে মিতালি পাঁতিয়েই আমার শৈশবের দিনগুলো কেটেছে।
বৃষ্টিতে ভিজে আম কুড়ানো, পিচ্ছিল রাস্তায় পিছলে যাবার পাল্লা,ঘুড়ি ওড়ানো, কলাগাছের ভেলায় চড়া এসব ছিল, আমার কাছে আকাশ –কুসুম কল্পনার মতো। তবে এলাকায় সমবয়সীদের সুন্দর ও গল্প হয়ে বাঁচা সব খুনসুটি দেখে নিজেকে যেন ভিনগ্রহের এলিয়েন লাগত । তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে, গ্রাম থেকে উঠে আসা ছেলে হিসেবে , নিজের কাছে অনুশোচনাবোধটা একটু বেশিই কাজ করত।
করোনার কারণে গত ২১ মার্চ থেকে আমি বাড়িতে। এতো দীর্ঘ ছুটি কখনও পাই নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ। সারাদেশ ঘোষিত ও অঘোষিত লকডাউনে। আর এই দীর্ঘ সময় ধরে বাড়িতে থাকা যেন, আমার অনেক অধরা স্বপ্নের শৈশবকে পূনর্জীবিত করেছে। গ্রামে এখনও করোনা রোগী শনাক্ত হয় নি। মুক্ত বাতাস আর নদীর স্রোতের ধ্বনির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চমৎকার এক আবহ আমার বিকেল গুলোকে বর্ণিল করছে।
অবসরে বই পড়ছি, বড়শি দিয়ে পুকুরে মাছ ধরছি।ঝড় আসলেই , ঝুড়ি নিয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আম কুড়রিয়েছি। রংবেরঙ্গের ঘুড়ি বানিয়ে উড়িয়েছি। কলাগাছের ভেলা বানিয়ে বুড়িতিস্তার বুকে ভেসে বেড়িয়েছি। আসমত চাচার নৌকায় করে তিস্তার বুকে ঘুরে ঘুরে নদীর চরের ফসলের ক্ষেতে, কৃষকদের ফসল ফলানো দেখেছি। রুপালি চাঁদের আলো যখন তিস্তার নদীর পানি্তে মিশে সৈন্দর্য্যে মণিকাঞ্চন যোগ করে, আমি বনে যাই বিনে টাকার দর্শক।পুকুরে সাতার কাটা আর দুষ্টোমিতে ভরা দুপুর গুলা মন্দ যাচ্ছে না।করোনার রাজতত্বে পৃথিবী যখন নিস্তব্ধ, আমার হাড়িয়ে যাওয়া শৈশব এসে কল্লোলিত করছে, আমার হৃ্দয়ের শান্ত সরোবরকে। তবে, বাবার কাছে সোনার হরিণ চেয়ে বায়না ধরার কোন সুযোগ এখন আর নেই।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।