সম্পর্ক ছিন্ন করার ভয়াবহতার পরিণতি কী

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
প্রকাশিত: বুধবার ২৮শে আগস্ট ২০২৪ ০৬:২০ অপরাহ্ন
সম্পর্ক ছিন্ন করার ভয়াবহতার পরিণতি কী

কোনো মুসলিমের জন্য সুসম্পর্ক নষ্ট করা মারাত্মক গুনাহ। হাদিসের নির্দেশনায় সম্পর্ক নষ্টের পরিণতি ভয়াবহ। যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা সুসম্পর্ক তৈরি করে ততক্ষণ পর্যন্ত গুনাহ হতে থাকে।তবে যদি কেউ মহান আল্লাহর জন্য কারো সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তার জন্য কেউ গুনাহগার হবে না।


প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহকে সম্পর্ক ছিন্নের গুনাহ থেকে ক্ষমা পেতে যেমন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন আবার এর কঠোর পরিণতির কথাও তুলে ধরেছেন। হাদিসের বর্ণনাগুলো তুলে ধরা হলো-


১. সম্পর্ক ছিন্ন করলে গুনাহ


হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের সঙ্গে তিনদিনের বেশি (সময়) সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা উচিৎ নয়। এরপর সে তার দেখা পেয়ে তাকে তিনবার সালাম দিলে যদি সে একবারও উত্তর না দেয় তবে সে তার গুনাহসহ প্রত্যাবর্তন করলো।’ (আবু দাউদ)


২. সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণতি জাহান্নাম 


হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলিমের জন্য তার অপর ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তিন দিনের বেশি থাকা হালাল নয়। এরপর সে ব্যক্তি তিন দিনের বেশি সময় সম্পর্ক ছিন্ন রাখা অবস্থায় মারা গেলো, সে জাহান্নামে প্রবেশ করলো।’ (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)


৩. সম্পর্ক ছিন্ন করা হত্যার শামিল


হজরত আবু খিরাশ আস-সুলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘যে তার ভাইয়ের সঙ্গে এক বছর সম্পর্ক ছিন্ন রাখলো সে যেন তাকে হত্যা করলো।’ (আবু দাউদ, আদাবুল মুফরাদ)


৪. সম্পর্ক ছিন্নকারীর ক্ষমা নেই


হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়। এরপর ঐদিন আল্লাহর সঙ্গে শিরককারী ও দু’ ভাইয়ের শত্রুতা পোষণকারীরা ছাড়া সবাকেই ক্ষমা করা হয়। আর বলা হয়, তোমরা এ দু’ জনকে শত্রুতা ত্যাগ করার সুযোগ দাও।ইমাম আবু দাউদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চল্লিশ দিন যাবত তাঁর কোনো এক স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। হজরত ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমৃত্যু তার এক পুত্রের সঙ্গে সম্পর্কছিন্ন অবস্থায় ছিলেন।


এ সম্পর্কে ইমাম আবু দাউদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সম্পর্কচ্ছেদ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকলে তাতে গুনাহ নেই। এমনিভাবে হজরত ওমর ইবনু আব্দুল আজিজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহিও এক ব্যক্তি থেকে তার চেহারা আঁড়াল করে রেখেছেন।’ (আবু দাউদ, মুসলিম, তিরমিজি, আদাবুল মুফরাদ)


সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন না করা। সব সময় সুসম্পর্ক বজায় রাখা। সম্পর্ক ছিন্নের গুনাহ ও শাস্তি থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।