চার প্রদেশ গঠনের সুপারিশ, কমবে ঢাকার চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বুধবার ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:০৩ অপরাহ্ন
চার প্রদেশ গঠনের সুপারিশ, কমবে ঢাকার চাপ

দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও কার্যকর করতে চারটি পুরাতন বিভাগের সীমানা অনুসারে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের বিস্তারের কারণে বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো যথেষ্ট নয়। এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ কমাতে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এতে স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হবে।

কমিশন সুপারিশ করেছে রাজধানী ঢাকা মহানগরীর জন্য দিল্লির মতো পৃথক ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট গঠনের। এতে নির্বাচিত আইনসভা ও স্থানীয় সরকার কাঠামো থাকবে। ঢাকা মহানগরী, টঙ্গী, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও নারায়ণগঞ্জকে একত্রিত করে এই কাঠামো গড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে এবং ঢাকার ওপর অতিরিক্ত চাপ কমবে।

প্রতিবেদনে জেলা পরিষদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কখনোই সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি এবং অধিকাংশ জেলা পরিষদ আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কমিশনের মতে, জেলা পরিষদের সম্পদ সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক সরকারের আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে। অন্যদিকে, পৌরসভাকে আরও শক্তিশালী করার সুপারিশ করা হয়েছে। পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটে, যাতে নির্বাচনের পর তারা মেম্বারদের উপেক্ষা করতে না পারেন।

উপজেলা পরিষদকে আরও কার্যকর করতে ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বাতিলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকে এক-তৃতীয়াংশকে আবর্তন পদ্ধতিতে উপজেলা পরিষদের সদস্য করার বিধান রাখা যেতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে তার দায়িত্ব শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

ভূমি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়াতে উপজেলা পর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেণির একজন ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কর্মরত কানুনগোদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে এই পদ পূরণ করা যেতে পারে। এ প্রক্রিয়ার জন্য সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

ইউনিয়ন পরিষদেও কাঠামোগত পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়নের ওয়ার্ড সংখ্যা ৯ থেকে ১১ করার এবং প্রতি ওয়ার্ডে দুজন সদস্য নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে, যেখানে একজন নারী সদস্য অবশ্যই থাকবেন। এতে নারীদের ৫০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে এবং তাদের কার্যক্রমের সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র থাকবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও মেম্বারদের ভোটে নির্বাচিত হবেন, যাতে তারা নির্বাচনের পর জনগণকে অবহেলা করতে না পারেন।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন ও বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়েছে। কমিশন প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার হাতে প্রতিবেদন তুলে দেন। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো আরও কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।