কাছ থেকে দেখা কর্ণেল শওকত আলী : এ্যাডঃ আলমগীর মুন্সী

নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সী মেহেদী হাসান
প্রকাশিত: রবিবার ১৪ই নভেম্বর ২০২১ ০৫:৫৮ অপরাহ্ন
কাছ থেকে দেখা কর্ণেল শওকত আলী : এ্যাডঃ আলমগীর মুন্সী

কর্ণেল শওকত আলী একটি নাম , একজন পরিপূর্ণ মানুষ একটি ইতিহাস , একটি স্মৃতির আধার , খাটি বাঙ্গালী মনেপ্রানে একজন অম্প্রদায়িক ব্যক্তি । মুক্তিযুদ্ধের ধারক বাহক । দেশ মাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে ১৯৭১ সালের একজন সাহসী যোদ্ধা যার ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতি অগাধ বিশ্বাসক্তি সর্বপরী আগরতলা সত্য মামলার অন্যতম ২৬ নং অভিযুক্ত ।


 এলাকার তথা নড়িয়া - সখিপুরের উন্নয়নের রূপকার । তাকে প্রথম যেদিন দেখি সেদিন থেকেই তাকেও বঙ্গবন্ধুকে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিকে ভালবাসী । ১৯৮৫ সনে যখন নড়িয়া সরকারী কলেজে আইএ ভর্তি হই তখন থেকেই তার সানিধ্য পাই । সেই থেকে মৃত্যু অবধি তার পাশে এবং সাথে অনেক কিছু শিখার ও জানার সুযোগ হয়েছে ।


 একজন সামরিক অফিসার হয়েও মুত্যু ভয় না করে বঙ্গবন্ধুর সাথে ফাসির মঞ্চে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন । তার মুখ থেকে শুনেছি কিভাবে আগরতলা সত্য মামলায় জড়িয়ে পরলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা । জীবনে অনেক অনেক সুবিধা তথা তৎকালিন জিয়া এরশাদ সরকারের মন্ত্রীর প্রলভন পেয়েও গ্রহণ না করা এবং দেশের প্রতি ও বঙ্গবন্ধু প্রতি ভালবাসা । 


মৃত্যুর আগমূহুর্ত পর্যন্ত অন্যায়ের কাছে মাথানত না করা । শতদ্রুত ভাইয়ের গুনের কথা বলে শেষ করা যাবে না । শওকত " ভাই এবং মাজেদা ভাবী শেষ্ঠ জুটি । শওকত ভাই সকল সময় ভাবীকে সাথে নিয়ে চলাফেরা করতেন এবং সকল কাজকর্মে ভাবীকে সাথে রাখতেন । মাজেদা ভাবীও শওকত ভাইকে প্রানের চেয়েও বেশী ভাল বাসতেন । শওকত ভাই যখন অসুস্থ্য ভাবী তখন ছোট শিশুর মত শওকত ভাইকে সেবাযত্ন করতেন । শওকত ভাই যখন অসুস্থ্য তখন একদিন ভাবী শওকত ভাইকে আমাকে দেখিয়ে বলতেছেন এটা কে শওকত ভাই তখন বলে ও আমাদের আলমগীর , শরীয়তপুরের আলমগীর । এই স্মৃতি আমি কোনদিন ভুলবনা কারন শওকত ভাই অসুস্থ্য অবস্থায় লোক চিনতে কষ্ট হতো অথচ আমাকে সে ঠিকই । চিনেছে । 


শওকত ভাইর সাথে আমার অনেক স্মৃতি যেমন আমার জীবনে আমি প্রথম সচিবালয় প্রবেশ করি শওকত ভাইর সাথে আমার জীবনে আমি প্রথম জাতীয় সংসদ ভবনে প্রবেশ করি শওকত ভাইর সাথে । আমি শরীয়তপুর সদরের লোক হলেও অনেকে জানত আমার বাড়ী নড়িয়া , কারণ শওকত ভাই আমাকে অনেক স্নেহ করতেন । 


১৯৮৮ সালে নড়িয়া কলেজে লেখা পড়ার সময় নড়িয়া কলেজের জামাতের শিক্ষক মাহাবুব সাহেবকে মারার কারণে আমরা ছাত্রলীগের চৌদ্দজন নেতা কর্মী গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে যাই । তখন জাতীয় পার্টির আমল টি এম গিয়াস উদ্দিন সাহেব প্রতিমন্ত্রী ছিলেন । শওকত ভাইর প্রচেষ্টায় মাদারীপুর জেলা জজ কোর্ট থেকে ২৯ দিনপর জামিন হয় । 


শরীয়তপুর কারাগার থেকে মুক্তি পাই । ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরে ৬ ডিসেম্বর / ৯৬ তারিখে জেলা আওয়ামীলীগ এর সম্মেলন হয় । উক্ত সম্মেলনে শওকত ভাই আমাকে জেলা আওয়ামীলীগ এর দপ্তর সম্পাদক এর দায়িত্ব দেন । শওকত ভাই ছিল এক কথার মানুষ যেটা সে পারতেন সেটা করতেন । যেটা পারতেন না সেটা না করে দিতেন । আমরা শত চেষ্টা করেও তাকে দ্বারা কোন অন্যায় আবদার রাখতে পারতাম না । 


কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোন সমস্যা হলে সব্বোর্চ গুরুত্ব দিয়ে সে কাজ করে নিতেন । জীবনে যতটুকু শিখেছি তার কাছ থেকেই । অবশেষে শওকত ভাইর মৃত্যুর পরে তার উত্তরসূরী ডায় খালেন শওকত আলী হাল ধরেছেন । দোয়া করি সে যেন বাবার আদর্শ বুকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে পারে । শওকত ভাইর পরলৌকিক জীবনের শান্তি তথা বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থান জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করছি ।