সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত কি অনন্তকাল চলবে, প্রশ্ন হাইকোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ১১ই নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৬ অপরাহ্ন
সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত কি অনন্তকাল চলবে, প্রশ্ন হাইকোর্টের

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেছেন, দীর্ঘ সাত বছরে মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ হবে কবে? তদন্ত কি অনন্তকাল ধরে চলবে? সোমবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিকুল আলমকে উদ্দেশ্য করে এসব প্রশ্ন করেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

পরে আদালত এ মামলায় সন্দেহভাজন আসামি তানভীর রহমানের মামলা বাতিলের আবেদনের ওপর আদেশের জন্য আগামি ১৪ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেন। আদালতে আসামি তানভীরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। এর আগে, ২০ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। মামলার সিডিসহ তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিকুল আলমকে হাজির হতে বলা হয়।

শুনানিকালে তদন্ত কর্মকর্তা খন্দকার শফিকুল আলম আদালতে বলেন, এ মামলার কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়নি। ডিএনএ টেস্টের জন্য চারটি নমুনা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। যার দুটি নমুনা এসেছে। এসব নমুনার সাথে আসামিদের কারো সাথে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। অপর দুটি পরীক্ষা এফবিআইতে পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। এ সময় অদালত বলেন, আপনারা আলামত হিসেবে কী পেয়েছেন?

জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আমরা কয়েকটি ছোরা, দা, বটি পেয়েছি। তবে রিপোর্ট না আসায় কারো সাথে মিল পাওয়া যায়নি। এ সময় আদালত হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ হবে কবে। তদন্ত কি অনন্তকাল ধরে চলবে? পরে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, বিজ্ঞ আদালত, আপনারা দ্রুত প্রতিবেদন শেষ করতে এক মাস সময় দিয়ে আদেশ দিতে পারেন।

এ সময় আদালত বলেন, সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে কিছুই হয়নি। এখন সেটির আদেশ দিবো। পরে আদালত এ মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তানভীর রহমানের মামলা বাতিলের আবদেনের ওপর আদেশের জন্য আগামী ১৪ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেন।

সাগর-রুনি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া ২৬ মাস জামিনে কারাগার থেকে জামিন পান হন তানভীর রহমান। তানভীরের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে। তিনি ঢাকায় উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে থাকেন। তানভীর রহমান ২০১২ সালের ১ অক্টোবর তাঁর কর্মস্থল স্কলাসটিকা স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় উত্তরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার।

এরপর ৯ অক্টোবর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে জানান, সাগর-রুনি হত্যা মামলায় তানভীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিন পান। পরে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি মুক্তি পান।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। সাগর তখন মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। হত্যাকাণ্ডে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে এ মামলায় মোট আটজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব