প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৭
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে পুনরায় আপিলের ওপর শুনানি শুরু করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৩৮ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে মামলাগুলোর শুনানি শুরু হয়। এই শুনানি দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট ড. শরীফ ভুঁইয়া, অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। উভয় পক্ষই আদালতের অনুমতিক্রমে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।
গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছিল আপিল বিভাগ। সে সময় আদালত জানিয়েছিল, তারা বিষয়টি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি করবে। সেই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার মামলাটি শুনানির দিন নির্ধারণ হয়। শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারপতি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আদালত সাময়িক নয়, বরং কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজছে। তিনি উল্লেখ করেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আদালতের রায় যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রথম সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৯৬ সালে পাস হওয়া ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। কিন্তু এর বৈধতা নিয়ে ১৯৯৮ সালে তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রিট খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে।
সে রায়ের পর পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং ২০১১ সালের ৩ জুলাই গেজেট প্রকাশিত হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক বাস্তবতা পুরোপুরি পাল্টে যায়। নতুন রাজনৈতিক পরিবেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার দাবি তোলেন বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল।
২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট নাগরিক সংগঠন সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান। এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং নওগাঁর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আলাদাভাবে আবেদন করেন।
মোট চারটি আবেদন এখন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের শুনানিতে রয়েছে। শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, আদালত কোনো সাময়িক রাজনৈতিক সমাধান চায় না, বরং এমন একটি কাঠামো খুঁজছে যা ভবিষ্যতে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা রোধ করবে। তিনি আরও বলেন, আদালতের লক্ষ্য এমন এক সমাধান বের করা যাতে দেশের গণতন্ত্র সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড়াতে পারে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
আইনজীবীরা বলছেন, এই মামলার রায় শুধু একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্জাগরণের প্রশ্ন নয়, বরং এটি দেশের সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থার ভবিষ্যতের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। আপিল বিভাগের এই শুনানি তাই শুধু আইনি নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এক ঐতিহাসিক মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।