প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১২:৪
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই-আগস্টের গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অভিযুক্তদের আগামী সাত দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে, অন্যথায় অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে। এর আগে সোমবার ট্রাইব্যুনাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ২৪ জুন ধার্য করা হয়েছে।
জানা যায়, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনালে মামলার শুনানি হয় এবং সেই সময় ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যায় অভিযুক্তরা সরাসরি নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী ছিলেন।
গত ১ জুন এই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৫টি অভিযোগ আমলে নেয় এবং একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শেখ হাসিনা নিজেই এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই বিচার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করছেন। মামলাটিকে ঘিরে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম, যা বিশ্বব্যাপী নজর কেড়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সরকার নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দেড় হাজারের মতো মানুষ হত্যা করে। এর জন্য দায়ী হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উঠে আসে এবং তদন্ত কর্মকর্তারা মামলার বিস্তারিত ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন।
এমন অবস্থায় আগামী ২৪ জুন মামলার গুরুত্বপূর্ণ দিন হতে যাচ্ছে। অভিযুক্তরা আত্মসমর্পণ না করলে বিচারের গতি আরও দ্রুততর হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মামলা বাংলাদেশের বিচার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। পাশাপাশি মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।