প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ১১:৩৮
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে নতুন গোপন তথ্য উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দাখিল করা একটি নথিতে জানা যায়, ৪ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণভবনে বেশ কয়েক দফা গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শেখ হাসিনা যে কোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবার নির্দেশ দেন। এই সময় সেনাবাহিনী প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেন, “যা হোক, ক্ষমতা ছাড়ব না।”
বৈঠকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী গুলি চালিয়ে বিক্ষোভ দমন করার প্রস্তাব দেন, যা নিয়ে এক সামরিক কর্মকর্তার রোষ প্রকাশ পায়। বৈঠক চলাকালীন এক অপরিচিত ব্যক্তি গণভবনে প্রবেশ করায় সভা দ্রুত শেষ হয়। অন্যদিকে, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা তাঁকে পদত্যাগের জন্য পা ধরে অনুরোধ করলেও তিনি রাজি হননি। পরে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যার মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে এবং শেখ হাসিনা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
নথিতে উল্লেখ আছে, ৫ আগস্ট দুপুরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র দেন এবং পরবর্তীতে ভারতে পালিয়ে যান। গণভবনে রুদ্ধদ্বার অবস্থায় কাটানো দুই দিনের মধ্যে আন্দোলন দমনের জন্য গৃহীত কঠোর ব্যবস্থাগুলোর তথ্যও এতে উঠে এসেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা মহানগরীর চানখাঁরপুল এলাকায় নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী নিহত হন।
১৪ জুলাই রাতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলাকে সহজ করে দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত গণহত্যা চালিয়ে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছেন।
নথির ভাষ্য অনুযায়ী, এই তথ্য বিশ্বের যে কোনো আদালতে উপস্থাপন করলে শেখ হাসিনাকে অপরাধী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব হবে। এই গোপন নথি রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে এবং ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নতুন আলোকে পরিচিত করে।