প্রকাশ: ৭ মে ২০২৫, ১৬:৩০
কল্যাণপুরের বহুল আলোচিত জাহাজবাড়ি অভিযানে ৯ তরুণ নিহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখানো পুলিশের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা এখনও মুখ খোলেননি। এই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় পুলিশের সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও মিরপুর জোনের সাবেক ডিসি জসিম উদ্দিন মোল্লাকে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তারা কারও সামনে এই ঘটনায় কিছুই বলেননি বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা।
বুধবার তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি মেলে। আগামী ২৫, ২৭ ও ২৯ মে—এই তিন দিনে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদের দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের দাবি, এই তিন কর্মকর্তার পরিকল্পনা ও নির্দেশেই ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রাতে কল্যাণপুরের জাহাজবাড়িতে অভিযান চালানো হয়, যেখানে ৯ তরুণ নিহত হন।
তদন্ত সংস্থার মতে, নিহতরা ইসলামি ভাবধারার অনুসারী ছিলেন, যাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে আটক করে জাহাজবাড়িতে এনে হত্যা করা হয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যে বলা হয়, তাদের জঙ্গি হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল যেন সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় সৃষ্টি হয় এবং ক্ষমতাসীন সরকারের শাসন টিকিয়ে রাখা যায়।
এই ঘটনার পরদিন মিরপুর মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়, যেখানে ১০ জনকে আসামি করা হয়। যদিও শুরুতে পুলিশ দাবি করে, নিহতরা নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তবে পরবর্তী তদন্তে এসব দাবির সত্যতা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
২০১৬ সালের গুলশান হামলার মাত্র ২৫ দিন পর এই অভিযান পরিচালিত হয়। বাড়িটির প্রকৃতি জাহাজের মতো হওয়ায় স্থানীয়রা একে ‘জাহাজবাড়ি’ নামে ডাকত। অভিযানের পর দাবি করা হয়, নিহতদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হন, আরেকজন পালিয়ে যান।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম বলেন, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যা। তিনি বলেন, এসব তরুণকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ঘটনাটি ‘জঙ্গি দমন’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল, যা প্রকৃতপক্ষে একটি নিষ্ঠুর রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড।
এই মামলায় তদন্ত এখনও চলছে। ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থাকে আরও দুই মাস সময় দিয়েছে। পরবর্তী ধাপে শহীদুল হক, আছাদুজ্জামান মিয়া ও জসিম উদ্দিন মোল্লার কাছ থেকে সরাসরি তথ্য নিতে চায় তদন্ত সংস্থা। এখন দেখার বিষয়, তারা আদৌ মুখ খোলেন কিনা।