চার প্রদেশ গঠনের সুপারিশ, নতুন ভাবনার পথে প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: রবিবার ১৯শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৩:৩৩ অপরাহ্ন
চার প্রদেশ গঠনের সুপারিশ, নতুন ভাবনার পথে প্রশাসন

দেশের চারটি পুরোনো বিভাগকে চারটি প্রদেশে রূপান্তর করার প্রস্তাব দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ সুপারিশ উঠে আসে। প্রদেশের হাতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাদে অন্যান্য বিষয়ে স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।  


সংবিধান সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার এবং দুর্নীতি দমন কমিশন নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি আয়োজিত এক সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যরা তাদের সুপারিশ তুলে ধরেন। যদিও সুপারিশ চূড়ান্ত নয়, তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাকে প্রদেশ করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা চলছে।  


কমিশনের একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, প্রদেশ গঠনের প্রস্তাবটি বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ার একটি অংশ। এ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করা। তবে প্রদেশগুলোর কাজ এবং কাঠামো কেমন হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। এটি একটি সংবিধানসংশ্লিষ্ট বিষয় হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছে।  


প্রদেশ গঠনের চিন্তা নতুন নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন একবার পাঁচটি প্রদেশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বিশাল জনসংখ্যার কারণে সরকারের কার্যক্রম জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে প্রদেশভিত্তিক প্রশাসন উপযোগী হতে পারে। তার মতে, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, সীমান্ত ও সমুদ্র নিরাপত্তা কেন্দ্রের হাতে রেখে প্রদেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া যেতে পারে।  


তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তার মতে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক আয়তন এবং ভাষাগত বৈচিত্র্যের অভাবে প্রদেশ গঠন অপ্রয়োজনীয়। বর্তমান বিভাগগুলোকে শক্তিশালী করাই যথেষ্ট হবে। প্রদেশ গঠন নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।  


বাংলাদেশে বর্তমানে আটটি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার প্রস্তাবও আলোচনা চলছে। তবে প্রদেশ গঠনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও পর্যালোচনা প্রয়োজন।  


জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতির সংস্কার। প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।  


কমিশনের সম্ভাব্য আরও সুপারিশের মধ্যে রয়েছে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথা বাতিল এবং তথ্য অধিকার আইনের আওতায় প্রতিটি জেলায় একজন কর্মকর্তা নিয়োগ। এসব সুপারিশের বিষয়ে এখনো আলোচনা চলছে, এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কমিশন।  


জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বলেছে, তাদের সুপারিশগুলো দেশব্যাপী সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তৈরি। তবে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, তা নিয়েও তারা পর্যবেক্ষণ করছে। 


সূত্র প্রথম আলো