চলতি বছরের শুরুতে মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ঘোষণা দেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই সময় মিয়ানমার থেকে কয়েকশো সেনা ভারতে পালিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়ে। বর্তমানে, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও মণিপুর রাজ্যে জাতিগত সংঘাতের কারণে কেন্দ্রীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পথে হাঁটছে।
গত বছরের মে মাস থেকে মণিপুরে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়। কিছুদিন ধরে এই সংঘাত থেমে থাকলেও সেপ্টেম্বরে পুনরায় সহিংসতা দেখা গেছে, যা মিয়ানমারের পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়ার জন্য সরকারকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের ১,৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যার মধ্যে মণিপুরের সীমান্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, এই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিতে ৩১ হাজার কোটি রুপি ব্যয় করা হবে। দিল্লির প্রত্যাশা, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। অমিত শাহ জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে মিয়ানমার সীমান্তের ৩০ কিলোমিটার অঞ্চল কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি এই কাঁটাতারের প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে, যা মণিপুরে চলমান অশান্তির পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশেও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে, যেখানে প্রতিটি রাজ্যের সাথে সীমান্তের দৈর্ঘ্য ভিন্ন।
তবে, ভারতীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের আপত্তি উঠেছে। অরুণাচল, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং মণিপুরের অধিবাসীরা দাবি করেছেন, তাদের আত্মীয়-স্বজন উভয় দেশেই বাস করেন এবং কাঁটাতারের বেড়া তাদের যাতায়াতের পথ রুদ্ধ করবে। স্থানীয় নেতাদের মতে, রাজনৈতিক সীমান্তের মাধ্যমে পরিবারের বন্ধন বিচ্ছিন্ন করা যায় না।
এমন পরিস্থিতিতে, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে, যা আগামী দিনে আরও বিতর্কিত হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।