ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের কেবিন থেকে শারমিন আক্তার (২৭) এর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় শারমিনের স্বামী মাসুদ হাওলাদারকে আসামী করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)মোঃ আজিমুল করিম জানান, লঞ্চের কেবিন থেকে উদ্ধার হওয়া তরুনীর মরদেহ স্বজনরা শনাক্ত করেছেন। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে নিহত শারমিনের বাবা এনায়েত হোসেন এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বাদী ও শারমিনের বাবা বলেন, তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে স্বামী মাসুদ হাওলাদার। লঞ্চের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে তার উপস্থিতি সেখানে ছিলো সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে।মাসুদই আমার মেয়ে শারমিনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যার দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই।
তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জের উত্তর রফিয়াদী এলাকায়।টেলিভিশন দেখে বিকেল ৩ টার দিকে জানতে পারি লঞ্চ থেকে যে মেয়ের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে সে আমাদের শারমিন। এরপর বাড়ি থেকে এসে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করি।পরে লঞ্চের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সেখানে মাসুদ হাওলাদারের উপস্থিতি নিশ্চিত হই।
তিনি বলেন, শারমিন আনুমানিক ১২ বছর ধরে ঢাকায় থেকে চাকুরি করে। গার্মেন্টেসে চাকুরির সুবাদে সর্বোশেষ ঢাকার তেজগাঁও থানাধীনা কুনিপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন বলে আমরা জানি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে শারমিনের সাথে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কামদেবপুরের পশ্চিম গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা জলিল হাওলাদারের ছেলে মাসুদ হাওলাদারের সাথে বিয়ে হয়।তবে এরআগে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার মেয়েকে ধর্ষন করে মাসুদ। সে ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানায় আমরা একটি মামলা করি। এরপরই মাসুদের পরিবার আমার মেয়ের সাথে তার বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
তিনি বলেন, বিয়ের পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তালবাহানা করতো মাসুদ। প্রথমে শারমিনকে আমাদের কাছ আলাদা করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে। পরে শারমিনকে রেখে মাসুদ আলাদা থাকতে শুরু করে। আবার একত্রে থাকাকালীন সময়ে শারিরীক নির্যাতন করতো বলেও মেয়ে আমাদের জানিয়েছে।
তিনি বলেন, শারমিন ঢাকা থেকে বরিশালে আসছে এ খবর আগে থেকে আমরা জানতাম না। মাসুদই তাকে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে বরিশালে আসে।
শারমিনের চাচাতো ভাই আরিফুর রহমান ও রমজান হোসেন বলেন, শারমিনকে নিয়ে মাসুদের লঞ্চে অবস্থানের দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় ধরা পরে, যা আমরাও দেখেছি। সেই নির্মমভাবে আমাদের বোন শারমিনকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। আগে থেকেই সে আমাদের বোনকে নানানভাবে নির্যাতন করতো। আর এতে মাসুদের পরিবারের পুরোপুরি সায় ছিলো।তাদের দাবি এ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)মোঃ আজিমুল করিম জানান, তার মামলার ছায়া তদন্ত করবেন আর নৌ পুলিশ করবে তদন্ত। বরিশাল সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)হাসনাত জামান বলেন, ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছে শারমিনের স্বামী মাসুদ। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে বরিশাল আসা এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের স্টাফ (গ্রীজার/লস্কর)কেবিন থেকে শারমিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।প্রথমে অজ্ঞাত পরিচয়ে থাকলেও পের ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে তার নাম শারমিন বলে শনাক্ত করা হয়। মরদেহ উদ্ধারের সময় তার শরীরে লাল রংয়ের কামিজ পরিহিতো ছিলো। আর পুরো বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে দিনভর প্রচার হয়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।