১২ বছর আগে, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডে ঘটেছিল এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে অন্যতম সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘটনা হিসেবে পরিচিত। আজও সেই ট্রাজেডির শোক ভারী হয়ে রয়েছে নিহত শ্রমিকদের পরিবারের ওপর, আর আহতরা এখনও ভোগান্তির মধ্যে আছেন।
তাজরীন ফ্যাশনে ৯৮৪ শ্রমিক কাজ করছিলেন অগ্নিকাণ্ডের সময়, যার মধ্যে ১১৩ জন প্রাণ হারান, আহত হন শতাধিক শ্রমিক। যদিও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও প্রতিবেদন অনুযায়ী, হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পর, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে, তবে সেখানে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ভবনটির চারপাশে এখনো পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন বিদ্যমান, যা স্থানীয়দের জন্য এক বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে হতাহত শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষত এখনো কাটেনি। তাদের মধ্যে অনেকেই আজও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে পারেননি, আর যারা শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন, তাদের জীবন অনেকটাই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তাদের একটাই দাবি— ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, পূর্ণবাসন এবং চিকিৎসা সেবা। অনেক শ্রমিক এখনও সরকারি বা কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্ণ ক্ষতিপূরণের প্রত্যাশী।
তাজরীন ফ্যাশনের মালিক মো. দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দায়বদ্ধতার প্রশ্ন ওঠে, বিশেষত তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের দাবি, তাঁকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। তবে ট্রাজেডির পর, মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কখনোই কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে, আজ ২৪ নভেম্বর নিহত শ্রমিকদের স্মরণে তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডের সামনে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। এছাড়া সারা দেশের পোশাক কারখানাগুলিতে এ দিনটিতে একাধিক কর্মসূচি পালন করা হবে, যাতে শ্রমিকদের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতি সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোযোগ আকর্ষিত হয়।
আজকের এই দিনটি মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে এক অগ্নিকাণ্ডে শত শত প্রাণ ঝরে পড়েছিল, এবং তা এখনও প্রতিটি শ্রমিক, তাদের পরিবার ও সমাজের জন্য এক অপ্রকাশিত ক্ষত হয়ে রয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।