প্রবল বর্ষণে পানির নিচে বরিশাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: সোমবার ৭ই আগস্ট ২০২৩ ০৮:৩৪ অপরাহ্ন
প্রবল বর্ষণে পানির নিচে বরিশাল

শ্রাবনের পূর্ণিমার মরা কাটালে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার ঝরানো প্রবল বর্ষণে বরিশাল মহানগরী সোমবার সকাল ১১টার মধ্যেই পানির তলায় চলে গেছে।


উপক’লভাগ সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে প্রবল বর্ষণের সাথে জোয়ারের পানিতে জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। সোমবার সকাল ৬টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশালে ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিাপাতের পরে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র ৬ ঘন্টায় মহানগরীতে আরো ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।


সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতে সকাল ৬টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আরো ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রবল বর্ষণে বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো শহরের রাস্তাঘাট প্রায় জনমানব শূণ্য।


গত এক সপ্তাহে বরিশালে প্রায় সাড়ে ৩শ মিলিমিটার এবং সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতে ৫শ মিলিমিটারেরও বেশী বৃষ্টি হয়েছে। জুলই মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮% কম বৃষ্টিপাতের পরে গত এক সপ্তাহের মাঝারী থেকে প্রবল বর্ষণে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের মাঠে থাকা প্রায় পৌনে ২ লাখ হেক্টরের আউশ ধান ও আরো অর্ধ লক্ষাধিক হেক্টরের আমন বীজতলার পুরোটই গত তিন দিন ধরে পানির তলায়।


ফলে কয়েক লাখ কৃষকের এখন মাথায় হাত। এবার বরিশাল অঞ্চলে আউশ ধান থেকে ৫ লাখ ৮৮ হাজার টন চাল পাবার লক্ষ স্থির করে রেখেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। কিন্তু গত ৪ মাসের কষ্টের আউশ ধান শেষ পর্যন্ত কৃষকের গোলায় কতটা উঠবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে।


একই সাথে চলতি খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ হেক্টরে আমন আবাদের লক্ষে মাঠে থাকা অর্ধ লক্ষাধিক হেক্টরের আমন বীজতলা ছাড়াও গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন সবজীও মারাত্মক হুমকির মুখে। চলতি মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমান থেকে প্রায় ১৭ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য রয়েছে।


সোমবার সকাল ৮টার পরেই বরিশাল মহানগরীতে মাঝারী থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরুর হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রবল বর্ষণ ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাঝারী আকারে অব্যাহত ছিল।


মহানগরীর প্রায় সব রাস্তাঘাটই পানির তলায়। নগরীর নবগ্রাম রোড সহ অনেক রস্তায়ই বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরছেন কৌতুহলী মানুষ। তবে নগরী সংলগ্ন কির্তনখোলা নদী তীরের একাধিক বস্তি সহ নগরীর বিভিন্ন এলকার বাড়ি ঘরেও পানি প্রবেস করায় সাধারন মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই।


এ মহানগরীর ড্রেন সহ পয়ঃ নিস্কাশনের ব্যবস্থাগুলো সুষ্ঠু পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে গোটা নগরী জলাবদ্ধতার কবলে। গত কয়েক বছরের দূর্বল পয়ঃ নিস্কাশন ব্যবস্থায় এ নগরী সামান্য বৃষ্টিপাতেই ডুবছে। সেখানে গত এক সপ্তাহের মাঝারী বর্ষন সোমবার সকাল থেকে প্রবল আকার ধারন করায় পরিস্থিতি এখন সব বর্ণনার বাইরে।


আবহাওয়া বিভাগ থেকে রোববার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বরিশাল সহ উপক’লভাগে ভারী বর্ষনের সতর্কতা জারী রাখা হয়েছে। মৌসুমী বায়ু বরিশাল সহ সন্নিহিত এলাকায় সক্রিয় এবং বঙ্গোপসাগরে মাঝারী থেকে প্রবল অবস্থায় রযেছে।


সোমবার সকাল ৯টার পরবর্তি ২৪ ঘন্টার পূর্বাভাসে বরিশাল সহ উপক’লভাগে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি সহ বজ্র বৃষ্টি, সে সাথে কোন কোন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।


বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দরকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেতের সাথে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টার পরবর্তি ৭২ ঘন্টায় বরিশাল সহ সন্নিহিত এলাকার আবহাওয়া পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তনের কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।