ফুলজোড় নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, বাড়িঘর সহ আবাদি জমি বিলিনের আশংকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
পারভেজ সরকার স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: রবিবার ২৩শে জুলাই ২০২৩ ০৬:২০ অপরাহ্ন
ফুলজোড় নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, বাড়িঘর সহ আবাদি জমি বিলিনের আশংকা!

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ফুলজোর নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে ফাতেমা ড্রেজার নামে একটি প্রতিষ্ঠান । নদীর বালু তোলায় ঝুঁকিতে রয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর ফসলি জমি ও ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক। খননযন্ত্রের মাধ্যমে তোলা সেই বালু দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে  রাধানগর চায়না প্রকল্পে। ২০ফিট নদী খননের নিয়ম থাকলেও এখন ৫০থেকে ৭০ফিট খনন করা হচ্ছে। যা বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটিকোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও নীরব রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি জানেন এবং তিনদিন বন্ধ রেখেছিলেন, এরপরে গোপন দেনদরবার করে আবার তা চালু হয়েছে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি  সাধারন মানুষের। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবী মাঝেমাঝেই ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। জানা যায়, ফুলজোড় নদীর দাদপুর জি'আর কলেজ থেকে নলকা ব্রিজ পর্যন্ত নদী খননে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম কোম্পানী কার্যাদেশ পায়। মোনেম কোম্পানী আবার দায়িত্ব প্রদান করেন  বাদল এন্টারপ্রাইজকে। নদীর খনন বালু স্থানীয় মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজসহ দাতব্য প্রতিষ্ঠানে  নিচু যায়গা ভরাটের কাজে বিনা মূল্যে দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। অবশিষ্ট বালু নিলামে বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্ত বাদল এন্টারপ্রাইজ নদী খনন করে বালু বিক্রি করে দেয় স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিকট। প্রভাবশালীরা বালু অল্পদামে কিনে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে হাতিয়ে নেয় কোটিকোটি টাকা। অনিয়মের মধ্যেই গত ৩০ জুন নদী খননের  কাজ শেষ করে চলে যায় বাদল এন্টারপ্রাইজ। 



সরেজমিন দেখা যায়, বাদল এন্টারপ্রাইজ নদী খনন কাজ শেষে করে চলে যাবার পরে ফুলজোড় নদীর রামপুর ও নলছিয়া এলাকায় ফাতেমা ড্রেজার নামে একটি প্রতিষ্ঠান  কাটার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে। বালু উত্তোলন করে ভলগেডের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ফুলজোড় নদীর সাহেবগঞ্জ বাজার এলাকায়। এখানে আনলোড যন্ত্রের মাধ্যমে পাইপলাইনে বুড়িবাড়ি ও রাধানগড়ে দুটি বুষ্টার মেশিন বসিয়ে ১ কিলোমিটার দূরে বালু নেয়া হচ্ছে রাধানগর চায়না প্রকল্পে। স্থানীয়দের  অভিযোগ, নদীর এই অংশ এমনিতেই গভীর হওয়ায় এখানে দীর্ঘদিন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। তবে ফাতেমা ড্রেজারটির মালিক স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় এখানে খননযন্ত্র বসিয়ে আবারও পাইপলাইন করে দেদারছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে রাধানগর চায়না প্রকল্পের নিচু জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। 



গতকাল রবিবার সকালে দেখা যায়, ফুলজোর নদীর রামপুরা ও নলছিয়া এলাকায় তিনটি ভলগেট ভাসছে। এর ওপর দুটি বালু তোলার যন্ত্র বসানো হয়েছে। একটি যন্ত্র থেকে পাইপ নদীতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই পাইপ দিয়ে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। অপর যন্ত্রটি পানির সঙ্গে সেই বালু মোটা লোহার পাইপের মাধ্যমে সামনে ঠেলে দিচ্ছে। 



নদীতে বালু তোলার কাজ তদারকি করছিলেন ৯জন শ্রমিক। এই কর্মযজ্ঞের চারপাশে পাহারায় নিয়োজিত আছেন আরও চার থেকে পাঁচজন।  তাদের  জিজ্ঞাসা করলে  বলেন, আমরা কজন এটি দেখভাল করি।



রায়গঞ্জ উপজেলার তিননান্দিনা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, খননের নামে নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদীর একই স্থানে গভীরতার সৃষ্টি হচ্ছে। এরফলে আমরা বাড়িঘর ফসলি জমি হারাতে বসেছি। এর কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার গাড়ী চালক  পাঠিয়ে কয়েকদিন বন্ধ রেখেছিলেন। এরপরে গোপন দেনদরবারের মাধ্যমে তা আবার চালু হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলেই ঠিকাদারের লোকজন বলেন,প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বালু তুলছি। আপনারা চিল্লাইয়ে কোন কাজ হবেনা।  সাহেবগঞ্জ বাজারের মদন কুমার বলেন, নদী ভাংগনের হাত থেকে মহাসড়ককে বাঁচাতে সবেমাত্র পানি উন্নয়ন বোর্ড তীররক্ষার কাজ শেষ করেছেন। এখন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং বালু লোড আনলোড করার কারনে আবার মহাসড়ক হুমকীর মুখে পড়েছে। ইউএনও স্যার মাঝেমাঝে আসেন দেখেন বন্ধও করে চলেন যান। আবার আগেই মতো চলে। তিনি আরও বলেন,স্যারের যাওয়া আসার মধ্যেই হয়তো কোন কিন্ত আছে। তাছাড়া অবৈধ কাজ চলে কি করে? 



ফুলজোড় নদী খনন করা প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ড্রেজার এর এমডি পাপ্পুর নিকট কাগজ পত্রের কথা জানতে চাইলে বলেন, আমরা নদী খনন প্রকল্পের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে  চুক্তি করে এই বালুগুলো বিভিন্ন প্রকল্পে সরবরাহ করছি। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন অবগত আছে। তাদের সাথে আলোচনা করেই বালু তোলা হচ্ছে। প্রশাসন তুলতে না দিলে কেউ বালু তুলতে পারবেনা। 



এ প্রসঙ্গে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৃপ্তি কণা মন্ডল তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনুমোদনহীনভাবে কেউ নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। তবে নানা কৌশলে যারা এমনটি করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে।