রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ‘চরবেতকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’র ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। আর এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করে তারা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ওই এলাকার লোকজন সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়।
দীর্ঘদিন ধরে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করলেও বিকল্প কোন ব্যবস্থা হয়নি। এ কারণে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। অনেক সময় সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে। পানিতে পড়ে নষ্ট হয় বই-খাতা ও পরণের পোশাক।
জানা যায়, ১৯৭৫ সালে দেবগ্রাম ইউনিয়নে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কয়েক বছর পর পদ্মারভাঙনের কবলে পড়লে বিদ্যালয়টিকে এক কিলোমিটার দূরে চর দেলন্দি সরিয়ে আনা হয়। কয়েক বছর পর দ্বিতীয় দফা ভাঙনের কবলে পড়লে চর দেলন্দির বিপরীত পাশে সরিয়ে আনা হয়।
সাঁতার না জানা শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকতে হয় অভিভাবকদের। সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মরা পদ্মা নদীর উপর অবস্থিত ‘চরবেতকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের সামনের বাঁশের সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ আশপাশের এলাকার লোকজন। বিদ্যালয় ছুটি হতেই ছাত্র-ছাত্রীরা কষ্ট এবং ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পাড়ি দিচ্ছে। এলাকার অনেকেই জানান, প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে এই নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে। এলাকার ছোট শিশুদের নিয়ে সাঁকো দিয়ে চলাচল করা আমাদের খুবই কষ্ট হয়। এখানে একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার।
সাঁকোটির পূর্বপারের স্থানীয় বাসিন্দা মো. মোবারক শেখ বলেন, এক-দুই দিনের নয়, বছরের পর বছর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও আমাদের।
এই খালের ওপর আমাদের ব্রিজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। বারবার তাগিদ দেওয়ার পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ভোটে পাস করার পর আর প্রতিশ্রুতির কথা মনে থাকে না।
চরবেতকা নতুনপাড়া এলাকার শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এ নড়বড়ে সাঁকোটি পারাপার হতে তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক সময় পা পিছলে পানিতে পড়ে বইপত্র নষ্ট ও আহত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকোর স্থানে এখনো কোনো কালভার্ট অথবা ব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা হয়নি। স্থায়ীভাবে একটি কালভার্ট বা ব্রিজ হলে এখানকার সকলের অনেক সুবিধা হতো।
একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, সাঁকোটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও শত ব্যস্ততার মাঝেও ছেলে মেয়েদের এই বাঁশের সাঁকো পার করেই স্কুলে পাঠাতে হয়। ‘সাঁকোটি নড়বড়ে থাকায় পারাপারে সবসময় ভয়ে থাকি। বিশেষ করে বর্ষাকালে এই সাঁকো পার হতে কষ্ট হয়। কাদা-পানিতে একাকার হয় খালের পার। প্রায় সময় পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসী তাহেরা জানান, বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনের পড়লে তা সরিয়ে শেষ পর্যন্ত কোন জায়গা না পেয়ে চরবরাট তার নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় অস্থায়ী ভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতেন। পরে তিনিসহ তার স্কুলের চার নারী শিক্ষক তেনাপচা নতুন পাড়া এলাকায় ৩৩ শতাংশ জায়গা কিনে ওই স্কুলের নামে লিখে দেন। ২০১৮ সালে ওই জায়গায় টিনের দুটি চৌচালা ঘর তৈরি করে পাঠদান শুরু করেন। নদী ভাঙনের কবলে পড়ার আগে বিদ্যালয়ে ২৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী ছিলো। এখন তা কমে ১৮৪ জন এসে দাঁড়িয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করে।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের পাকা ভবন ও খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আশা করছি তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, চারবার নদীভাঙনের শিকার হওয়ায় চরবেতকা সরকারি প্রাথমিক পাকা করা হয়নি।
সর্বশেষ স্থায়ী জায়গা হওয়ায় গত বছর পাকা ভবনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে খালের ওপর যাতায়াতের জন্য একটি সেতু নির্মাণের কথাও জানানো হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খাঁন বলেন, বিদ্যালয়ের পাকা ভবন নির্মাণ এবং খালের ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দ্রুত
বরাদ্দ আসার কথা রয়েছে। বরাদ্দ আসলেই আমরা কাজ শুরু করবো।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।