এবার সুরভী-৯ লঞ্চে আগুন, যাত্রীদের মারধর ॥ হামলার শিকার সাংবাদিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: রবিবার ৯ই জানুয়ারী ২০২২ ০৩:০২ অপরাহ্ন
এবার সুরভী-৯ লঞ্চে আগুন, যাত্রীদের মারধর ॥ হামলার শিকার সাংবাদিকরা

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকা-ে বহু যাত্রী হতাহতের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বরিশালগামী সুরভী-৯ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চাওয়ার অপরাধে লঞ্চ স্টাফদের হামলার শিকার হয়েছে কিছু যাত্রী। এদিকে ওই লঞ্চে থাকা একাধিক যাত্রী ফেসবুক লাইভে লঞ্চে অগ্নিকা-ের চিত্র তুলে ধরায় বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে। রবিবার সকালে সুরভী-৯ লঞ্চটি বরিশাল নৌবন্দরে আসলে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান বরিশালের একাধিক সংবাদকর্মী। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয় লঞ্চ স্টাফরা। এ সময় দুই সংবাদকর্মীর উপর হামলা এবং তাদের ক্যামেরা ভাঙচুর করে তারা। খবর পেয়ে কোতয়ালী মডেল থানা এবং নৌপুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে হামলাকারীরা দ্রুত সটকে পড়েন। এ ঘটনায় হামলার শিকার সংবাদকর্মীরা মামলা দায়ের করবেন বলে জানা গেছে।


জানা গেছে, শনিবার রাতে ঢাকা সদরঘাট থেকে সুরভী-৯ লঞ্চটি বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। লঞ্চটি ঘাটত্যাগ করার পর রাত ১০টার দিকে চাঁদপুর পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগেই লঞ্চের দোতলায় সাইলেন্সার থেকে আগুন লাগে। যদিও লঞ্চ কর্তৃপক্ষের দাবী, সাইলেন্সার থেকে ধোয়া বের হয়েছিল। এদিকে লঞ্চে থাকা যাত্রীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে এবং কোন কোন যাত্রী ফেসবুকে ঘটনার লাইভ দেন এবং যাত্রীদের রক্ষায় ৯৯৯-এ ফোন করেন। যাত্রীদের কাছ থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে চাঁদপুরের মোহনপুর লঞ্চঘাটে লঞ্চটি আটকে দেয়া হয়। চাঁদপুর থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আগুন নেই নিশ্চিত হওয়ার পর লঞ্চটি ছাড়া হয়। নৌ ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা গিয়ে লঞ্চ পরীক্ষা করে জানান, আগুন লাগেনি, সাইলেন্সার অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে যাওয়ায় ধোঁয়া বের হচ্ছিল। 


সুরভী ৯ লঞ্চের যাত্রী সুরঞ্জিৎ দত্ত লিটু বলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সম্মেলন শেষে তারা ঢাকা থেকে ফিরছিলেন। রাতে যা যা হওয়ার হয়েছে। বরিশাল ঘাটে পৌঁছানোর পর ছাত্র-যুব-ঐক্য পরিষদের নেতা আবির কুন্ডু ও সুজয়ের উপর অতর্কিত হামলা চালায় লঞ্চের স্টাফরা। তিনি বরেন, সারা রাত ঘুমাতে পারেনি লঞ্চের যাত্রীরা। এরপর লঞ্চ স্টাফরা হামলা করেছে। এই লঞ্চে যাত্রী সেবা নয়, যাত্রীদের জিম্মি করা হয়।’ 


এদিকে রবিবার বেলায় ১১টায় লঞ্চটি বরিশাল নৌবন্দরে পৌঁছানোর পর সুরভী-৯ লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া এবং ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা যাত্রীদের খুঁজে তাদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে লঞ্চ স্টাফদের বিরুদ্ধে। সেই হামলার ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গেলে  দুই সংবাদকর্মীর ওপর দুই দফা হামলা এবং তাদের ক্যামেরা ভাঙচুর করে লঞ্চের ম্যানেজার মিজান ও স্টাফরা। । খবর পেয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল এবং নৌ-থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে হামলার পর পরই অভিযুক্ত লঞ্চ স্টাফরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। যদিও এ ঘটনায় লঞ্চের ম্যানেজার মিজানকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চের পরিচালক রেজিন-উল-কবির।


এদিকে সংবাদকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন হামলার শিকার দুই ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন বরিশাল অফিসের ক্যামেরা পার্সন দেওয়ান মোহন ও চ্যানেল ২৪ এর বরিশাল অফিসের ক্যামেরা পার্সন রুহুল আমিন। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের বরিশাল ব্যুরো প্রধান কাওছার হোসেন রানা জানান, এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়ায় যাবেন তিনি।


ক্যামেরা পার্সন রুহুল আমিন জানান, শনিবার রাতে লঞ্চে আগুনের ঘটনায় যারা ফেসবুকে লাইভ দিয়েছেন এবং ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেছেন সকালে লঞ্চ থেকে নামার সময় সেইসব যাত্রীদের আটকে রেখে মারধর করে সুরভী-৯ লঞ্চের স্টাফরা। এ খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য তিনি এবং দেওয়ান মোহন কি ঘটনা ঘটেছে জানতে চাওয়া মাত্রই সুরভী-৯ লঞ্চের স্টাফরা তাকে এবং মোহনকে মারধর শুরু করে। তিনি তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাটি অন্যান্য সহকর্মীদের জানালে তারা এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পূর্বেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। 


বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তার সামনেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। 


কোতয়ালী মডেল থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ কমিশনার রাখি আক্তার বলেন, ‘সুরভী-৯ লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে লঞ্চের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


এদিকে সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে বরিশালের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনতিবিলম্বে এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন তারা। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।