প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত ইউরোপের দেশ স্পেন। মহামারি এ ভাইরাস ঠেকাতে নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি পুরো স্পেনে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সরকার। কিন্তু থামছে না বিপর্যয়, প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯২ জনে।রবিবার (১৫ মার্চ) পর্যন্ত দেশটিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন ৮০০০ জন।এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৫১৭ জন রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে, স্পেন সরকার দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছে। এই জরুরি অবস্থা ১৫ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস প্রতিরোধে গত সোমবার থেকে পুরো দেশকে রেডজোনের আওতাভুক্ত ঘোষণা করার পর থেকেই গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে দেশের চার কোটি ৬৭ লাখ মানুষ।আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিউজিয়াম, থিয়েটার, সিনেমা, স্টেডিয়াম, কনসার্টসহ জনসমাগমের স্থানসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।দেশটির ব্যস্ততম শহরগুলো পরিণত হয়েছে জনশূন্য নগরীতে। কোথাও কেউ নেই এ যেনো জনমানবহীন এক ভুতুড়ে আতঙ্কের নগরী। সারাদেশে ফার্মেসি এবং সুপার শপ (খাবারের দোকান) ছাড়া সব কিছুই বন্ধ রয়েছে ।
১৩ বছর যাবত পরিবার নিয়ে বার্সেলোনায় বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসী তানিয়া আক্তার বলেন, 'করোনা ভাইরাসের কারণে এখানে আমরা সবাই আমাদের সন্তান এবং পরিজন নিয়ে উদ্বেগ এবং আতঙ্কের মধ্যে আছি। উৎসবের শহর বার্সেলোনার রাস্তাঘাট আমরা কখনো এমন জনশূন্য দেখিনি। এখানকার প্রায় সব কিছু বন্ধ, বিশেষ জরুরি কারণ দর্শানো ছাড়া বাহিরে যাওয়া যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাইকিং করে বাহিরে যেতে না করছে।
’রাজধানী মাদ্রিদে বসবাসরাত ওলিউর রহমান বলেন, এখনকার বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এখানে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, গির্জা, বিনোদন কেন্দ্রসহ সবকিছু বন্ধ রয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। জরুরি কাজ ছাড়া বাহিরে যাওয়া যাচ্ছে না, অযথা বাহিরে গেলেই জরিমানা করা হচ্ছে। এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা খুব আতঙ্কিত। যথাযত নিয়মগুলো মেনে চললে আশা রাখি আমরা খুব শিগগির এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসবো।
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে এ ভাইরাসের প্রকোপে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য শহরের চেয়ে বেশি। সেখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যাবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা। গত শনিবার স্পেনে ১৮ ঘণ্টায় আরও দেড় হাজার মানুষের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবরে সবাই আতঙ্কিত। শহরের ব্যস্ততম সড়কপথগুলো ফাঁকা, শপিংমল হাটবাজার পর্যটন কেন্দ্র জনশূন্য। সবাই বাহিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে গেলেও জরিমানা করা হচ্ছে। এক ভীতিকর পরিস্থিতিতে আছি সবাই।
স্পেনের সব শহরের প্রবেশদ্বারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এক শহর থেকে অন্য শহরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ এ নিয়ম বা আইন অমান্য করলে তাকে অর্থদণ্ড এবং কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রভাবে থমকে আছে গোটা স্পেন। অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে এমন আশঙ্কা করছে দেশটির অর্থনীতিবিদরা।স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের মিশন উপ-প্রধান এম হারুন আল রাশিদ বলেন, এই মুহূর্তে সকলকে স্প্যানিশ সরকারের আইন মানতে হবে ও নিজ বাসায় অবস্থান করে দেশকে সুরক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, আপনার সচেতনতা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। নিজে ও অন্যের সুরক্ষায় সর্তকতা অবলম্বন করুন। আপাতত বাংলাদেশ ভ্রমণে বিরত থাকুন।
ইনিউজ ৭১/ জি.হা
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।