প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৪১
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আবারও ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। রোববারের এই হামলায় অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। সারাদিন ধরে গাজার বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলার ফলে শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংসযজ্ঞ ও আতঙ্ক।
ইসরায়েলি সামরিক সূত্র জানিয়েছে, রাফা সীমান্ত এলাকায় হামাসের হামলায় তাদের দুই সেনা নিহত ও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছে। ঘটনার পরপরই তারা পাল্টা বিমান হামলা শুরু করে। এ সময় ইসরায়েল-সমর্থিত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষে আরও দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়।
তবে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাফায় এমন কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তারা দাবি করেছে, ইসরায়েল কোনো উস্কানি ছাড়াই নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করছে বেসামরিক এলাকায়। হামাস মুখপাত্র বলেন, “ইসরায়েল নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে এবং নিরীহ মানুষকে লক্ষ্য করে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।”
দিনভর বিমান হামলার পর সন্ধ্যায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতি দিয়ে যুদ্ধবিরতি পুনঃকার্যকরের ঘোষণা দেয়। আইডিএফ জানায়, “রাজনৈতিক নির্দেশনা অনুযায়ী এবং সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর গাজায় পুনরায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়েছে।” তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, ঘোষণার পরও গাজা সিটির কিছু এলাকায় মাঝে মাঝে গোলাবর্ষণ চলছে।
গাজার মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী না থাকায় আহতদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা গাজায় মানবিক করিডর খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছানো যায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের এই হামলা কেবল যুদ্ধবিরতি ভঙ্গই নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনেরও চরম লঙ্ঘন। কারণ এসব হামলায় সাধারণ জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার আহ্বান জানালেও, ইসরায়েল তার আগ্রাসী মনোভাব থেকে সরে আসেনি।
এদিকে গাজায় হতাহতদের জন্য তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া রাফা ও খানইউনিস এলাকায় এখনো উদ্ধার তৎপরতা চলছে।
ফিলিস্তিনের জনগণ বলছে, প্রতিদিনই তাদের জীবনে নতুন করে নেমে আসে মৃত্যু ও ধ্বংসের ছায়া। তারা আশা করছে, বিশ্ব সম্প্রদায় দ্রুত পদক্ষেপ নেবে যাতে এই মানবিক বিপর্যয় থামে এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।