প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩
গাজা উপত্যকায় আবারও রক্তপাত ঘটল যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরপরই। দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী মঙ্গলবার গাজা সিটির দুটি পৃথক স্থানে গুলি চালিয়ে নয়জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। স্থানীয় সময় বিকেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে যখন নিহতরা নিজেদের বাড়িতে ফেরার পথে ছিলেন বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে নিহতদের মরদেহ গাজার আল আহলি ও আল নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিহতরা সেনা সদস্যদের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলেন এবং সন্দেহভাজন হিসেবে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। তবে গাজার স্থানীয় বাসিন্দারা এই দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, নিহতদের কেউই সশস্ত্র ছিলেন না। তারা যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর নিজেদের বাড়িতে ফিরছিলেন মাত্র।
গত ১৩ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় একটি বন্দি বিনিময় হয়। হামাস ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে জীবিত অবস্থায় মুক্তি দেয়, বিনিময়ে ইসরায়েলও ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়। এই বন্দিদের স্বাগত জানাতে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে বিপুল জনসমাগম হয়েছিল।
হামাসের জিম্মি মুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। কিন্তু নতুন এই হামলা যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আন্তর্জাতিক মহল এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং যুদ্ধবিরতির পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবারের হামলায় নিহতদের মধ্যে কয়েকজন নারী ও কিশোরও রয়েছেন। গাজা সিটিতে এখনো ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই আবারও আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে গেছেন, কারণ তারা ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কা করছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে আকস্মিক এক হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জন জিম্মি হন। এর পর থেকেই ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং অসংখ্য ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি এখন চরম সংকটে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে লাখো মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে জীবনযাপন করছে। নতুন এই হামলা সেই মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।