প্রকাশ: ৮ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৩৭
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা নগরী দখলের পরিকল্পনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নেতারা এই পদক্ষেপকে ‘মহাবিপর্যয়ের শুরু’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। একই সময়ে জিম্মি পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করছেন, নেতানিয়াহু রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে জিম্মিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন।
গাজায় বন্দি এক জিম্মির বাবা ইহুদা কোহেন একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নেতানিয়াহু চায় জিম্মিরা মারা যাক, তাহলে গাজায় আরও নির্মম হামলা চালানো সম্ভব হবে।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র নিজের রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অভিযোগ বিশ্ববাসীর মনে এক গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ইসরায়েলি নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা ৮ আগস্ট গাজা নগরী দখলের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে। যদিও সেনাপ্রধান আয়াল জামির এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করলেও মন্ত্রিসভা বিকল্প পরিকল্পনাটি নাকচ করে দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ওই হামলার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে ৭ অক্টোবর প্রথম ধাপ শুরু হবে।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন এটি ভুল সিদ্ধান্ত এবং অবিলম্বে পুনর্বিবেচনা দরকার। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই নীতিকে গণহত্যামূলক ও সম্প্রসারণবাদী হিসেবে উল্লেখ করেছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার টার্ক বলেছেন, এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পরোক্ষ অবমাননা। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া ও সুইজারল্যান্ডও যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এই সিদ্ধান্তকে বিপজ্জনক ও মানবিক সংকট আরও বাড়ানোর মতো বলেছে। তারা উল্লেখ করেছে, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আরও সংঘাত ডেকে আনে।”
গাজায় সাম্প্রতিক ইসরায়েলি পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘ, তুরস্ক, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিতকরণ ও যুদ্ধবিরতি আহ্বান জানিয়েছে।
নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপ শুধু ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নয়, বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও মানবিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের নজর এখন তাকিয়ে আছে এই চাপের মধ্যে ইসরায়েল কবে ও কীভাবে তাদের কৌশল পরিবর্তন করবে। পরিস্থিতির উন্নতি ও শান্তির প্রত্যাশায় সবাই অপেক্ষা করছে।