জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চালু হয়েছে দেশের প্রথম ‘স্কিন ব্যাংক’। এটি গুরুতর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন আশার সঞ্চার করেছে। রোববার এই বিশেষ সেবার উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ইতোমধ্যে চারজন দাতার চামড়া সংগ্রহ করে দুজন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের মতে, স্কিন ব্যাংকের মাধ্যমে দগ্ধ রোগীদের জীবন রক্ষা করা সহজতর হবে। দুই বছরের শিশু হামিদা, যার শরীরের ৪২ শতাংশ অংশ দগ্ধ হয়েছিল, স্কিন ব্যাংকের সংরক্ষিত চামড়া প্রতিস্থাপনের পর এখন অনেকটাই সুস্থ। একইভাবে আট বছর বয়সী মরিয়মের শরীরের ৭৭৯ সেন্টিমিটার পোড়া অংশ প্রতিস্থাপিত চামড়া দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে এবং তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, গুরুতর দগ্ধ রোগীদের শরীর থেকে পানি, লবণ, প্রোটিন ও তাপ বের হয়ে যাওয়ায় তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। স্কিন ব্যাংক থেকে সংগৃহীত চামড়া ব্যবহার করলে ক্ষতস্থানের উপরিভাগ রক্ষা হয় এবং নতুন চামড়া গজানোর প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়, যা রোগীর জীবন রক্ষায় সহায়ক।
বিশ্বের অনেক দেশেই এই পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারতের মতো দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে স্কিন ব্যাংক কার্যক্রম চালু রয়েছে। এখন বাংলাদেশেও এটি চালু হওয়ায় দেশের দগ্ধ রোগীদের জন্য বড় সুযোগ সৃষ্টি হলো।
একজন সুস্থ ব্যক্তি চাইলে জীবনে একাধিকবার চামড়া দান করতে পারেন। দাতার শরীর থেকে অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে চামড়া সংগ্রহ করা হয়, যা ১৪ দিনের মধ্যে পুনরায় তৈরি হয়ে যায়। দান করার পর হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয় না, ফলে এটি নিরাপদ ও কার্যকর একটি প্রক্রিয়া।
বার্ন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহবুব হাসান বলেন, যথেষ্ট স্কিন ব্যাংক ও পর্যাপ্ত সংরক্ষিত চামড়া থাকলে দগ্ধ রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। মৃত ব্যক্তির দান করা চামড়াও সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা মৃত্যুর ৬ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে সংগ্রহ করতে হয়।
বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মারুফুল ইসলাম জানান, দেশে চামড়া দানের বিষয়ে কোনো আইনি বাধা নেই। ইনচার্জ তামান্না সুলতানা বলেন, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে স্কিন ব্যাংকে সংরক্ষিত চামড়া দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব। এ সেবা চালু হওয়ায় এখন দেশের দগ্ধ রোগীরা আরও ভালো চিকিৎসা পাবেন এবং তাদের জীবন রক্ষার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।