জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বুধবার ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৪:০০ অপরাহ্ন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘ একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সহিংসতায় ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে এবং হাজার হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় এই অনুসন্ধান পরিচালনা করে।


প্রতিবেদনটি ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয় এবং এতে বলা হয় যে, সংঘটিত সহিংসতার সময় নিরাপত্তা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অব্যাহত পদ্ধতিগত নির্যাতনের ফলে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন অনেকেই এবং শতাধিক ব্যক্তি বিচারের বাইরে মৃত্যুবরণ করেন। এদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু, যা খুবই উদ্বেগজনক।


জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও জানানো হয় যে, নিরাপত্তা বাহিনী অত্যাধিক বলপ্রয়োগ করে হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে গুরুতর আহত করেছে এবং বহু মানুষকে অবৈধভাবে আটক করা হয়েছে। নির্যাতন, শারীরিক অত্যাচারের পাশাপাশি অব্যাহত আটক করার ঘটনা ঘটেছে। শিশুদের ওপর নির্যাতনেরও প্রমাণ মিলেছে। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল জানায়, এসব ঘটনার মধ্যে ৭.৬২ এমএম গুলি ব্যবহারের প্রমাণও পাওয়া গেছে।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১,৭০০ এরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে শিশুদের বড় একটি অংশ ছিল। পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী শিশুদের টার্গেট কিলিং, অমানুষিক নির্যাতন এবং গুলি চালানোর মতো অমানবিক কাজ করেছে। বিশেষ করে, এসকেএস, টাইপ-৫৬, বিডি-০৮ বন্দুক দিয়ে গুলি চালানোর ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। 


এছাড়া, প্রতিবেদনটি জানায়, নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে যে, তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তবে, এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এই ঘটনায় কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কিছু তদন্ত চলছে এবং কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 


জাতিসংঘের প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে কঠোর মন্তব্য করা হয়েছে। তবে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা জাতিসংঘের সদস্যদের মধ্যে প্রশ্ন উঠিয়েছে। প্রতিবেদনটি আরও জানায় যে, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি পদ্ধতিগত চক্রের মাধ্যমে এই মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটানো হয়েছে।


এদিকে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে আরও গুরুত্ব পেয়েছে।


এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি সতর্কতা হিসেবে কাজ করবে, যা ভবিষ্যতে সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।