আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আয়নাঘর সারা বাংলাদেশজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এবং এর সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মী ও ভুক্তভোগীদের নিয়ে তিনি এ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনের পর, ড. ইউনূস বলেন, "আমার ধারণা ছিল যে, এখানে আয়নাঘর বলতে যে কয়েকটি স্থাপনা আছে, তা-ই। কিন্তু এখন শুনলাম, সারা দেশে এর ভার্সন ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ বলছে ৭০০, কেউ বলছে ৮০০, তবে প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব নয়।" তিনি বলেন, এসব স্থানে আটক ব্যক্তিদের প্রতি চরম অমানবিক আচরণ করা হয়েছে, যা শুনে বিশ্বাস করা কঠিন।
ড. ইউনূস আরও বলেন, "এই পরিস্থিতি নৃশংস। যতটা শুনি, ততটাই অবিশ্বাস্য মনে হয়। এটা আমাদের সমাজেরই অংশ কি না, সেই প্রশ্ন আমরা সবাইকে করতেই হবে।" তিনি বলেন, "এটা কি আমাদেরই পৃথিবী, আমাদেরই সমাজ, যেখানে এমন জিনিস ঘটছে?"
এর আগে, ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আয়নাঘর পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন, ১৯ জানুয়ারি ড. ইউনূসকে গুমের ঘটনায় অগ্রগতি সম্পর্কে জানায় এবং তাকে আয়নাঘরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করতে আহ্বান জানায়। ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, "এটা একটি অন্ধকার যুগের নমুনা। এটি 'আইয়ামে জাহেলিয়াত' এর মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা সমাজের জন্য বিপদজনক।"
ড. ইউনূসের মন্তব্যে আরও বলা হয়, "আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সেসব 'বিশেষ' স্থানগুলোকে আয়নাঘর বলা হয়। এখানে অনেককে বন্দি করে রাখা হয়েছে।" সারা বাংলাদেশজুড়ে এসব গুমের ঘটনা ঘটে আসছে এবং সেখানে যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে, তা ভুক্তভোগীদের মুখ থেকে শোনা যায়।
একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০৫ জনকে গোপনে বন্দি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৪০ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং ৬৬ জন সরকারি হেফাজতে গ্রেপ্তার অবস্থায় উদ্ধার হন।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই এখনও মৌন রয়েছেন, তবে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে আয়নাঘরের ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেছে। এসব ভুক্তভোগীরা ফেরত আসার পর তাদের মুখে উঠে আসে আয়নাঘরের বিষয়ে নানা কাহিনী।
এছাড়া, প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩৪৪ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন এবং তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তির পরিবার এখনও তাদের সন্ধানে হন্যে হয়ে রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তার বক্তব্যে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো উত্থাপন করেছেন, যা গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।