উল্লাপাড়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, তদন্ত চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ শামছুল হক - সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শুক্রবার ৩১শে জানুয়ারী ২০২৫ ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন
উল্লাপাড়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, তদন্ত চলছে

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় শিল্পী খাতুন নামে এক গৃহবধূর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, তাকে জোরপূর্বক গ্যাস ট্যাবলেট খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার রাতে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের মধ্যে এ নিয়ে বিভক্ত মত রয়েছে, কেউ একে হত্যাকাণ্ড বলছেন, কেউ আবার আত্মহত্যার দাবি করছেন। নিহত শিল্পী উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের ইনসাফ আলীর স্ত্রী।  


নিহতের স্বামী ইনসাফ আলী অভিযোগ করেছেন, প্রতিবেশী ইমান, বারিক, কবির, মোতালেব ও রব্বেলদের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। বুধবার তিনি সিরাজগঞ্জ আদালতে মামলার হাজিরা দিতে গেলে ওই সময় ইমান গংরা বিরোধপূর্ণ জমি দখলের চেষ্টা করে। তার স্ত্রী বাধা দিলে মুর্শিদা ও রওশোনা নামে দুই নারী তাকে জোর করে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানে গ্যাস ট্যাবলেট খাইয়ে দেয়। শিল্পীর চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায়।  


পরে স্বজনরা শিল্পীকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন, তবে কিছুক্ষণ পরেই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর শিল্পীর স্বামী থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।  


এদিকে অভিযুক্ত কবির দাবি করেছেন, জমি নিয়ে তাদের বিরোধ থাকলেও বিষ খাওয়ানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, বিরোধের বিষয়টি সত্য, তবে এ ধরনের কাজের সঙ্গে তারা জড়িত নন।  


উধুনিয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য আছমা খাতুন জানান, ঘটনার পরপরই তিনি নিহতের বাড়িতে যান এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, স্থানীয়রা বলেছেন, মুর্শিদা ও রওশোনা শিল্পীকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল এবং কিছুক্ষণ পর তার নিথর দেহ বাড়িতে ফেলে রেখে যায়। তবে গ্যাস ট্যাবলেট খাওয়ানোর বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য তার কাছে নেই, যদিও শিল্পীর মুখে তীব্র গন্ধ ছিল।  


সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে এবং লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  


স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল, যা একাধিকবার গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এটি সংঘর্ষের দিকে গড়ায়। শিল্পীর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং পুলিশ পরিস্থিতি নজরে রাখছে।  


এখন পর্যন্ত পুলিশ কোনো গ্রেপ্তার বা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।