সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিন ভারতীয় নাগরিককে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “ইসলাম বিদ্বেষী” পোস্ট দেয়ার অপরাধে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। করোনাভাইরাস তাণ্ডবের সময় ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দু আধিপত্যবাদীদের সহিংসতামূলক কার্যক্রম দেখা দিয়েছে। এই তিনজন আরো ছয় ভারতীয় নাগরিকদের সাথে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন উগ্রবাদী পোস্ট করে আসছিল। পরে সামাজিক যোগামাধ্যম ব্যবহারকারী এসব পোস্ট নিয়োগ কোম্পানীর সামনে নিয়ে আসলে তাদের বরখাস্ত করা হয়।
এদের মধ্যে একজন দুবাইয়ের একটি ইতালিয় রেস্টুরেন্টের কর্মচারী। এই ভারতীয় লোকটি শেফ হিসাবে কাজ করছিল বলে মনে করা হয়। গাল্ফ নিউজের দেয়া তথ্য অনুসারে শারজাহ ভিত্তিক নিউমিক্স অটোমেশন আরো জানিয়েছে যে তারা পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত একটি স্টোরকিপারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা তাদের বেতন আটকে রেখেছি এবং তাদেরকে কাজে না আসতে বলেছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এসব ব্যাপারে আমাদের ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। যে কেউ কারোর ধর্মের অবমাননা বা অবজ্ঞার জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে।
আর তৃতীয় ব্যক্তি দুবাই-ভিত্তিক ট্রান্সগার্ড গ্রুপে নিযুক্ত ছিলেন। কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশাল ঠাকুর নামের এক কর্মচারী যিনি তার ফেসবুক পেজ থেকে বেশ কয়েকটি ইসলাম বিরোধী বক্তব্য পোস্ট করেছিলেন তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ট্রান্সগার্ড কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার আসল পরিচয় বের করে যথাযথ কতৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরব আমিরাতের সাইবার ক্রাইম ধারা অনুযায়ী তাকে দুবাই পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে।
হিন্দু আধিপত্যবাদীদের দ্বারা ভারতজুড়ে ক্রমবর্ধমান মুসলিম বিরোধীতার জেরে আরব আমিরাতে এমন বরখাস্তের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির ক্ষমতাসীন কট্টরপন্থী বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুগত হিন্দুরা করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মুসলমানদের দোষারোপ করায় এই ধরনের আক্রমণ বেড়েছে।
২০০২ সালের গুজরাটে দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশি মুসলমানকে হত্যার দায়ে মোদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তার সমর্থকরা ভাইরাসটিকে “করোনা জিহাদ” বলে অভিহিত করে এই মহামারীটি হিন্দুদের সংক্রামিত করতে মুসলমানরা ষড়যন্ত্র করছে বলে মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়ে দিয়েছে।
উগ্র হিন্দুদের ক্রমাগত ইসলাম বিদ্বেষী পোস্টের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে বাসিন্দারাও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। তারা হিন্দু চরমপন্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ভারতীয় প্রবাসীদের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া সৌদি আরবের একজন ধর্মীয় নেতা হিন্দু চরমপন্থীদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রতি আহবান জানান।
আর কয়েক দিন আগে আরব আমিরাতের প্রিন্সেস হেন্দ আল কাসিমি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘ভারতীয়দের কেমন লাগবে, যদি আমাদের দেশ বলে যে আমিরাতে হিন্দুদের ঢুকতে দেয়া হবে না? এই দেশ থেকে বছরে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করে নিয়ে যান ভারতীয়রা। যদি সেটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কী হবে বুঝতে পারছেন? মিডল ইস্ট মনিটর।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।