ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে শাস্তি ঘোষণা করেছে পাকিস্তানের আদালত। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে পরিচালিত জবাবদিহি আদালতের বিচারক আল-কাদির ইউনিভার্সিটি প্রজেক্ট ট্রাস্টের মামলায় ইমরান খানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে ইমরানকে ১০ লাখ পাকিস্তানি রুপি এবং বুশরা বিবিকে তার অর্ধেক জরিমানা করা হয়েছে। ইমরান খান গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আদিয়ালা কারাগারে বন্দী এবং তার বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু মামলা চলমান রয়েছে।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বরে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আদালতে সাতটি নতুন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এসব মামলায় তার দলের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভে সহিংসতার অভিযোগ আনা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ থেকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব পিছু হটলেও এতে ছয়জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য এবং তিনজন রেঞ্জার্স কর্মকর্তা ছিলেন।
বিক্ষোভের সময় পুলিশ ৯৬ জন সন্দেহভাজনের একটি তালিকা জমা দেয়। এতে ইমরান খান, বুশরা বিবি, সাবেক প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি এবং পিটিআইয়ের অন্যান্য শীর্ষ নেতার নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। আদালত এদের সবাইকে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অভিযোগে বলা হয়, পিটিআই নেতারা পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা উসকে দেন এবং সরকারি কর্মচারীদের বিক্ষোভে ব্যবহার করেন।
ইমরান খানের সমর্থকরা দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। তবে পাকিস্তানের সরকার ও আদালত জানায়, দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার ভিত্তিতেই এসব মামলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইমরান খানের কারাদণ্ড তার রাজনৈতিক জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে এবং আগামী নির্বাচনেও তার দল পিটিআইয়ের অবস্থান দুর্বল হতে পারে।
ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এদিকে তার সমর্থকদের মাঝে হতাশা বাড়ছে। দলের অনেক নেতা ও কর্মী ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং নতুন নতুন অভিযোগ আনা হচ্ছে। দলের অভ্যন্তরীণ সংকটও বেড়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিক্ষোভে সহিংসতার কারণে অনেক সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পিটিআই সমর্থকদের কার্যক্রমে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে তাদের বাড়িতে আটকা পড়েন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ঘটনা ইমরানের দলের প্রতি সাধারণ জনগণের সমর্থন কমিয়ে দিতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইমরান খানের সমর্থকরা এই রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইমরান খান ও তার স্ত্রীর কারাদণ্ড এবং দলের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো পাকিস্তানের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। আগামী দিনের পরিস্থিতি নির্ভর করবে ইমরান খান ও তার দলের কৌশল এবং সরকারের পদক্ষেপের ওপর।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।