সকালে পুলিশের ডিউটি, সন্ধেবেলা দুঃস্থ শিশুদের শিক্ষক তিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ২৭শে আগস্ট ২০২২ ০৭:২৮ অপরাহ্ন
সকালে পুলিশের ডিউটি, সন্ধেবেলা দুঃস্থ শিশুদের শিক্ষক তিনি

তাঁর কাজ অন্ধকার জগৎ নিয়ে, অবসর পেলে সেই মানুষটাই শিক্ষার আলো পৌঁছে দেন দুঃস্থ পরিবারের শিশুদের মধ্যে। তিনি রামজন্মভূমি অযোধ্যার ‘বর্দিওয়ালে গুরুজি’, পুলিশের পোশাক পরা শিক্ষক। সরযূর ঘাটে প্রতিদিন সন্ধেবেলা বসে তাঁর পাঠশালা। পড়ান হিন্দি, ইংরেজি, অংক।


২০১৫-র ব্যাচের আইপিএস রণজিৎ যাদব বর্তমানে অযোধ্যা রেঞ্জের সাব-ইন্সপেক্টর। এই মানুষটাই ওদের শিক্ষক, ওরা পবিত্র সরযূ নদীর ঘাট, রামজন্মভূমির বিভিন্ন গলি-গলতার মন্দির-মঠ চত্বরে বসে ভিক্ষে করা ভিখারিদের সন্তান। কেউ কেউ আবার অনাথ। হয়তো দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের কাছে অবহেলায় বেঁচে। এইসব শিশুদের স্বেচ্ছায় পড়াচ্ছেন রণজিৎ। শুরুটা কিন্তু সহজ ছিল না। কারণ পুলিশ গুরুজিকে বেজায় ভয় পেত ছোটরা। সেই ভয় ভাঙেন রণজিৎ।


রণজিৎ জানান, নয়াঘাট পুলিশ পোস্টে পোস্টিংয়ের হওয়ার পরেই তিনি দেখেন, সরযূর ঘাটে ভিখারিদের সঙ্গে তাঁদের ছেলেমেয়েরাও ভিক্ষে করে। থাকে খুরজা কুণ্ড এলাকায়। রণজিৎ বলেন, “আমি উদ্যোগী হয়ে ছেলেমেয়েদের আমার কাছে পড়াতে পাঠাতে বলি বাবা-মায়েদের। শুরুতে তেমন সাড়া পাচ্ছিলাম না। ধীরে ধীরে ছাত্র সংখ্যা বাড়ে।”


সাব-ইন্সপেক্টর রণজিৎ যাদবের পাঠশালায় ছাত্রের সংখ্যা এখন ৬০। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু যার। আইনরক্ষকের কর্তব্য পালনের পর প্রতিদিন সন্ধে ৭টা থেকে ৯টা অবধি ছাত্র পড়ান। শুরুতে নিজের বেতন থেকে ছেলেমেয়েদের জন্য বই-খাতা-পেনসিল ও ব্ল্যাকবোর্ড কেনেন। পরে স্থানীয় মানুষ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাহায্যে এগিয়ে আসেন। ছাত্ররা কী বলছে?


লিখতে-পড়তে জানলে যে তাদের জীবন বদলাতে পারে, এতদিনে বুঝে গিয়েছে দুঃস্থ ছেলেমেয়েগুলো। ১৫ বছরের শিব বলে, “আমি এখন অল্প লিখতে ও পড়তে পারি, গুনতেও পারি।” বর্দিওয়ালে গুরুজির আরেক ছাত্র ১৩ বছরের মুসকান স্বপ্ন দেখছে আগামী দিনে সরকারি স্কুলে ভরতি হবে সে। শিক্ষিত হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। গুরুজির ভালাবাসায় শিক্ষার আলোয় একদিন মুছে যাবে পরিবারের নিকষ কালো অন্ধকার, আশা করেন ওদের বাবামায়েরাও।