পেশা তাঁর চুরি হলে কী হবে, তাঁকে অধার্মিক ভাবলে কিন্তু খুব ভুল হবে। ঠাকুর-দেবতার ব্যাপারে কিন্তু তাঁর বেজায় ভক্তি। তাই তো গয়নাগাটি-টাকাকড়ি লোপাটের আগেও ঈশ্বর আরাধনার কথা ভোলেননি এই ধার্মিক চোর। কোথায় ঘটেছে এমন ঘটনা, আসুন শুনে নিই।
আগেকার দিনে বড়সড় লুঠ করতে যাওয়ার আগে ভক্তিভরে মা কালীর উপাসনা করত ডাকাতদল। এমনকি ঈশ্বরকে তুষ্ট করতে নরবলি পর্যন্ত দেওয়ার রেওয়াজ ছিল সেকালে। তবে সেই দিনকাল সব পাল্টেছে। আজকের ডাকাতদের না আছে রমরমা, না আছে সেই তেজ। তবে তাই বলে ডাকাতি হয় না বললে কিন্তু ভুল হবে।
চুরি, ডাকাতি তো হামেশাই লেগে রয়েছে দেশ জুড়ে। তবে কেরলের কোল্লাম জেলার একটি বেসরকারি অর্থসংস্থায় সম্প্রতি হানা দিয়েছিল এক বেদম ঈশ্বরভক্ত চোর। প্রাচীনকালের কোনও ডাকাতদের সে বংশধর কিনা জানা নেই, তবে তেমন ভাবেই লুঠের আগে মেতেছিল সে পুজোঅর্চনায়।
রামকৃষ্ণদেব স্বয়ং বলেছিলেন, জীবনের সব কাজের ক্ষেত্রেই উচিত ঈশ্বরের প্রতি মনকে সমর্পিত রাখা। আর তাই সাহস জোগায় কাজে। কেরলের এই চোর ‘রামকৃষ্ণ কথামৃত’ না পড়লেও তাঁর বাতলানো পথেরই অনুসারী সে। নইলে চুরির আগে এমন ধর্মেকর্মে মতি কিন্তু সচরাচর দেখা যায় না। চোরের আয়োজন করা সেই পুজোয় ব্যবস্থার ত্রুটি ছিল না এতটুকুও। বেলপাতা থেকে শুরু করে ধূপধুনো, এমনকি একটি মদের বোতল পর্যন্ত সে উৎসর্গ করেছিল পুজোয়। আর তার পরে ওই বেসরকারি অর্থসংস্থাটির লকার থেকে ৩০ লক্ষ টাকার গয়না ও ৪ লক্ষ টাকা নগদ নিয়ে পালায় সেই চোর।
পুলিশ এসে ঘটনাস্থলে একটি দেবতার মূর্তিও খুঁজে পেয়েছে। মিলেছে একটি ছোট্ট বর্শা ও লেবু। মনে করা হচ্ছে, পুজোঅর্চনার অঙ্গ হিসেবে লেবুও উৎসর্গ করেছিল সে। পাশাপাশি সারা ঘরে ছড়ানো ছিল মানুষের কাটা চুল। পুলিশের সন্দেহ, পুলিশের কুকুরকে দিকভ্রান্ত করতেই সেসব ছড়িয়েছিল সন্দেহভাজন। না, এখানেই শেষ নয়। যাওয়ার আগে ঘটনাস্থলে একটি পোস্টারও সেঁটে গিয়েছে সেই চোরবাবাজি। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘আমি কিন্তু ভয়ঙ্কর! আমার পিছনে ধাওয়া করে কোনও লাভ নেই।’
এই চুরির পিছনে কারা ছিল, তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ। ওই অর্থসংস্থাটির মালিক রামাচরণ নায়ারের দাবি, কম করে হলেও অন্তত একশোটি স্বর্ণমুদ্রা ছিল সংস্থার লকারে। ছিল নগদ টাকাও। সেসবই নিয়ে চম্পট দিয়েছে চোর। আপাতত ওই ধার্মিক চোরকে শ্রীঘর দর্শন করাতেই কোমর বেঁধেছে কেরলের কোল্লাম জেলার পুলিশ।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।