পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে লাগাম টানতে ও ভবিষ্যৎ বিশ্বে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা এড়াতে সম্মত হয়েছে পাঁচ বিশ্বশক্তি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য—যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স গত সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে। পাঁচটি দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক। এই দেশগুলো সংক্ষেপে ‘পি-৫’ নামে পরিচিত। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও রয়টার্সের।
বিবৃতিতে পাঁচ বিশ্বশক্তি বলেছে, ভবিষ্যৎ বিশ্বে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি এড়ানোর দায় এই পাঁচ দেশের। বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে নিয়ে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি এড়ানো ও কৌশলগত নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য এই পাঁচ দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে। স্থানীয় সময় গত সোমবার রাশিয়ার প্রশাসনিক কেন্দ্র ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে। কোনো বিষয়ে একমত হয়ে পাঁচ বিশ্বশক্তির বিবৃতি দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।
‘যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে কখনোই জয় ছিনিয়ে আনা যাবে না’, এমন মন্তব্য করে বিবৃতিতে পাঁচ বিশ্বশক্তি আরও বলেছে, যেসব দেশ আগে থেকেই পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক, তাদের সেসব অস্ত্র শুধু প্রতিরক্ষামূলক কৌশল বাস্তবায়ন এবং যুদ্ধ ও আগ্রাসন প্রতিরোধের জন্য থাকতে পারে।
চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওঝু বলেন, এই যৌথ বিবৃতি পারমাণবিক শক্তিসমৃদ্ধ পাঁচটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাদের মধ্যকার প্রতিযোগিতার সম্পর্ক সমন্বয় ও সহযোগিতায় বদলাতে ভূমিকা রাখবে। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে চীনের ‘প্রথমে ব্যবহার নয়’ নীতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি আরও বলেন, শুধু আক্রান্ত হলে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করবে বেইজিং।
বিবৃতিটি প্রকাশ করে ফরাসি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্রায়নের পথে লাগাম টানতে পাঁচ বিশ্বশক্তির সদিচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্য গার্ডিয়ানকে জানান, কয়েক মাসের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বিশ্বশক্তি এই যৌথ বিবৃতির বিষয়ে একমত হয়েছে। সংকটাপন্ন সময়ে এই বিবৃতি ঝুঁকি কমানোর পথ দেখিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, স্নায়ুযুদ্ধ সমাপ্তির পরে থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক এখন সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন, তাইওয়ান-হংকংসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চরম বিরোধে জড়িয়েছে ওয়াশিংটন ও বেইজিং। এমন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি প্রশমনে পাঁচ বিশ্বশক্তির ঐকমত্য ও যৌথ বিবৃতির গুরুত্ব অনেক। এটা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সই হওয়া এনপিটি চুক্তি নিয়ে পর্যালোচনা করতে একটি সম্মেলন আয়োজনের পথ উন্মুক্ত করবে।
চীনা অস্ত্রভান্ডারের আধুনিকায়নে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৭ সালের মধ্যে চীন নিজেদের পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা ৭০০-তে উন্নীত করতে পারে। আর ২০৩০ সালে তা হাজার ছুঁতে পারে। গত নভেম্বরে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বারবার চীন ও রাশিয়ার প্রতি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে বহুপক্ষীয় চুক্তি সইয়ের তাগিদ দিয়ে আসছে।
ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েন ও দেশটিতে সামরিক আগ্রাসনভীতির জেরে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন করে শীতল হয়ে উঠেছে। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সতর্ক করে দিয়েছেন। পুতিনকে বাইডেন বলেন, ইউক্রেনে আগ্রাসনমূলক আচরণ করলে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে। এর ফলে ইউরোপে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা ১০ জানুয়ারি আবার বৈঠক বসবেন। এতে নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়াকে মজুত কমাতে হবে: চীন
নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। একই সঙ্গে চীন জানিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ করার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি প্রশমনে চীনসহ পাঁচ বিশ্বশক্তির যৌথ বিবৃতি প্রকাশের এক দিন পরই বেইজিং এ অবস্থানের কথা জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের মহাপরিচালক ফু কং সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের ৯০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাতে রয়েছে। দেশ দুটির উচিত তাদের হাতে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত কমিয়ে আনা। তাহলেই বিশ্বে ভারসাম্য ফিরবে।
এ সময় ফু কং আরও বলেন, চীন কখনোই আগে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করবে না। শুধু আক্রান্ত হলেই এই অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। প্রতিরক্ষামূলক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে বেইজিং।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।