ভারতের কর্নাটকের পর এবার মধ্যপ্রদেশের একটি কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজ্যটির দাতিয়া জেলার একটি সরকারি কলেজে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মহিলা মোর্চা ‘দুর্গা বাহিনীর’ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
‘দুর্গা বাহিনীর’ দাবি, কলেজ ক্যাম্পাসে মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব পরে আসতে পারবেন না। এদিকে কর্নাটক হাইকোর্টের অন্তবর্তীকালীন নির্দেশে বলা হয়েছে, সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত আপাতত সেখানকার ছাত্রীরা হিজাব পরে স্কুল বা কলেজে আসতে পারবেন না।
এ নিয়ে মঙ্গলবারও একাধিক মামলার শুনানি চলে আদালতে। তার মধ্যেই সামনে এল মধ্যপ্রদেশের ঘটনা। দাতিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ডিআর রাহুল জানান, কোনো সম্প্রদায়ের লেবাস বলে পরিচিত পোশাক পরে আসতে নিষেধ করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
জানা গিয়েছে, সোমবার দুই কলেজ ছাত্রী হিজাব পরে ক্লাসে ঢোকার পর আন্দোলন শুরু করে ‘দুর্গা বাহিনী’। ঘেরাও হন কলেজের অধ্যক্ষ। তাদের দাবি, কলেজ ক্যাম্পাসে হিজাব নিষিদ্ধ করতে হবে। তার পরেই এই কলেজ কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত এসেছে।
তবে অধ্যক্ষের দাবি, কলেজের মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্রের দাবি, এ রাজ্যে হিজাব নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।
এদিকে হিজাব বিতর্ক দক্ষিণ ভারতের কর্নাটক থেকে এবার উত্তরপ্রদেশে পৌঁছে গেছে। সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করতে বলেছেন একদল যুবক।
কর্নাটকের কয়েকটি সরকারি স্কুল-কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করা হলে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন মুসলিম ছাত্রীরা। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুই ডজনেরও বেশি যুবকের একটি দল আলীগরের ধর্ম সমাজ কলেজে গিয়ে হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি স্মারকলিপি ধরিয়ে দেয়।
যুবকদের গায়ে গেরুয়া উত্তরীয় ছিল। তারা কলেজের প্রধান প্রক্টর মুকেশ ভদ্বরাজকে বলেন, শ্রেণিকক্ষে ধর্মীয় লেবাস পরার অনুমোদন দেওয়া উচিত হবে না। তবে কলেজের বাইরে পরতে পারবে।
মুকেশ ভদ্বরাজ সাংবাদিকদের বলেন, বছর দুয়েক আগেও একই বিতর্ক তোলা হয়েছিল। আমরা কোনো ধর্মীয় লেবাস পরার অনুমোদন দিই না। সবার জন্য ইউনিফর্ম রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মেয়েরা বোরকা পরে আসলেও তারা কমনরুমে গিয়ে তা বদলে ইউনিফর্ম পরে আসে। অর্থাৎ তারা ইউনিফর্ম পরেই ক্লাসে অংশ নেয়।
মুসলমানরা বলছেন, হিজাবের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা তাদেরকে নিঃশেষ করার আরেকটি উপায়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের মোট জনসংখ্যা ১৩৫ কোটির কাছাকাছি, এর ১৩ শতাংশ মুসলিম।
ভারতের উত্তর প্রদেশে যত লোক বাস করে, তা ব্রাজিলের মোট জনসংখ্যার কাছাকাছি। ভারতের রাজনীতিতে খুবই প্রভাবশালী এ রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হিন্দু সন্ন্যাসী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি থেকে এসেছেন।
উত্তর প্রদেশে এখন কয়েক ধাপে বিধানসভা নির্বাচন চলছে, রাজনৈতিক ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে রাজ্যটিতে প্রায়ই হিন্দু-মুসলিম বিরোধকে কাজে লাগানো হয়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।