কানাডার পরিত্যক্ত স্কুল থেকে ২১৫ শিশুর দেহাবশেষ উদ্ধার

কানাডায় পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য ব্রিটিশ কলম্বিয়ার কামলুপস এলাকার আদিবাসী শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি পরিত্যক্ত ও প্রচীন আবাসিক স্কুল থেকে ২১৫ জন শিশুর মৃতদেহের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। তারা সবাই রেড ইন্ডিয়ান এবং এদের মধ্যে ৩ বছর বয়সী শিশুও আছে। শুক্রবার এ খবর প্রকাশ্যে আসার পর ঘটনাটিকে হৃদয়বিদারক বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি।

এক টুইট বার্তায় ঘটনাটিকে দেশের ইতিহাসের অন্ধকার ও লজ্জাজনক অধ্যায়ের একটি নমুনা উল্লেখ করে জাস্টিন ট্রুডো বলেন, শিশুদের দেহাবশেষ উদ্ধারের খবরে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। দেশের অধিকাংশ মানুষের মানসিক অবস্থাও এখন আমার মতোই। আমরা জাতি হিসেবে সবসময় আদিবাসীদের পাশে রয়েছি।

কামলুপস এলাকায় রেড ইন্ডিয়ানদের বিভিন্ন গোত্র বসবাস করে আসছে। যে শিশুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তারা সবাই সেখানকার টিকেমলুপস টে সেকওয়েপেমেক গোত্রভূক্ত ছিল। এমনটাই জানিয়েছেন সেই গোত্রের বর্তমান প্রধান রোসান্নে ক্যাসিমির।

এক বিবৃতিতে তিনি জানান, ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। যা কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে। আরো দুঃখজনক হলো এ ধরনের ঘটনাগুলো কোথাও লিপিবদ্ধ নেই।

কানাডার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, অষ্টাদশ শতকের শেষ থেকে উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে দেশটিতে দলে দলে ইউরোপীয় বসতকাররা (সেটলার) আসতে থাকে। তখন তারা স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পরে। কিন্তু এতে সবসময় রেড ইন্ডিয়ানদের পরাজয়বরণ করতে হতো। কারণ, তাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। অন্যদিকে, ইউরোপীয় বসতকারদের হাতে উন্নত অস্ত্র ও প্রযুক্তি ছিল।

তখন রেড ইন্ডিয়ানদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তকরণ করতে বিভিন্ন আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা শুরু করে ইউরোপীয় সেটলাররা। দেশটিতে এমন ১৩৯টি আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ক্যাথলিক খ্রিস্টান মিশনারিদের পরিচালিত এই স্কুলগুলোর মধ্যে কামলুপসের স্কুলটি সবচেয়ে বড়। এখানে মোট ৪ হাজার ১০০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতো। ভর্তি হওয়া শিশুদেরকে ব্যাপকভাবে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হতো এবং তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাপন নিয়ে কটাক্ষ করা স্কুলগুলোর নিমিত শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পরিচালনা করে ক্যাথলিক খ্রিস্টান মিশনারিরা। এরপর কামলুপসের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ স্কুলটির দায়িত্ব নিলে প্রায় ১০ বছর পর ১৯৭৮ সালে এটিকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

#ইনিউজ৭১/জিয়া/২০২১