সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়ছে, রোজার আগে মিলবে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: সোমবার ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩০ পূর্বাহ্ন
সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়ছে, রোজার আগে মিলবে স্বস্তি

সয়াবিন তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর কৌশল সফলভাবে প্রয়োগ করছে। গত ডিসেম্বরে বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হলে সরকারকে ৮ টাকা দাম বাড়াতে বাধ্য করা হয়। সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও কিছুদিন পর আবার তেলের সংকট তৈরি হয়েছে। আসন্ন রমজান মাসেও এই সংকট থাকবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে রোববার ভোক্তা অধিদপ্তরের এক বৈঠকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দায় চাপিয়েছেন।  


বৈঠকে টিকে গ্রুপের পরিচালক সফিউল তসলিম জানান, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি বড় চালান আসবে এবং ২৬ ফেব্রুয়ারির পর তেলের সংকট থাকবে না। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ এবং বাংলাদেশ অ্যাডিবল অয়েল চাহিদার তুলনায় বেশি তেল আমদানি করছে, যা ৭-১০ দিনের মধ্যে বাজারে আসবে বলে জানানো হয়।  


এদিকে, বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থার মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য কেনার শর্ত আরোপ করা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে এমন প্রতারণার কিছু প্রমাণ মিলেছে।  


বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। অনেক খুচরা ব্যবসায়ী জানান, পাইকারি পর্যায় থেকেই তেলের সংকট শুরু হয়েছে, ফলে তারা নির্ধারিত দামে তেল সংগ্রহ করতে পারছেন না। বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেক দোকানে নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল কিনতে অন্য পণ্যও নিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  


সরকারি পর্যায় থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণের নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সংকটের মূল কারণ খুঁজে বের করা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভোজ্যতেলের বাজারে স্বচ্ছতা আনতে কঠোর মনিটরিং ও যথাযথ নীতি প্রয়োগ করা জরুরি। এছাড়া রমজানের আগে দ্রুত তেল সরবরাহ নিশ্চিত না করা গেলে সাধারণ মানুষকে আরও ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে।  


বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অবশ্য দাবি করছে, তারা যথাযথভাবে তেল সরবরাহ করছে এবং সংকট কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হচ্ছে না। তবে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, সরবরাহ কম থাকায় বাজারে দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভোক্তারা।  


রমজানের সময় বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভোক্তা অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের পক্ষ থেকে মনিটরিং আরও বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কেউ বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে।