একুশের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে এবারের অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ নতুনরূপে আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, একুশ আমাদের সত্তার পরিচয়, জেগে ওঠার প্রেরণা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বিস্তৃত চেতনার প্রতীক। জুলাই অভ্যুত্থানে তরুণদের আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে এবং এই বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, বাংলা একাডেমি তরুণ লেখকদের জন্য গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটিকে আরও গভীর গবেষণার দিকে নজর দিতে হবে। বাংলা একাডেমি পুরস্কারের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। পুরস্কার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ নিয়ে কেউ অপব্যবহার করলে তা সংশোধন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে এবং বই প্রকাশে সেন্সর আরোপের কোনো পরিকল্পনা নেই। কেউ যদি সরকারকে কটাক্ষ করেও মতপ্রকাশ করে, তাতেও সমস্যা নেই। তবে বই সেন্সর করা হবে বলে যে অপপ্রচার চলছে, তা ভিত্তিহীন। পাঠ্যপুস্তক নিয়েও কোনো সেন্সরের পরিকল্পনা সরকারের নেই এবং এটি সম্পূর্ণ গুজব বলে দাবি করেন তিনি।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা জানান, বই প্রকাশের আগে সরকার তা পড়ে দেখবে—এমন ধারণা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দেওয়ার নীতিতে সরকার বিশ্বাসী। কিছু গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে যা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।
এবারের বইমেলায় নানা ধরনের বইয়ের সমাহার থাকছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। দেশ-বিদেশের লেখকদের বই, গবেষণা সামগ্রী, ইতিহাস, সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক বিষয়ক বইসহ নানা বিষয়ে সমৃদ্ধ করা হয়েছে এবারের মেলা।
বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, একুশ মানে বাঙালির অস্তিত্বের লড়াই। সেই লড়াই বইয়ের মাধ্যমে চেতনায় স্থায়ী হতে হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে বাংলা একাডেমি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এদিকে, বইমেলা ঘিরে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। মেলায় নতুন বই প্রকাশ, লেখক-পাঠক আড্ডা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য থাকছে বিশেষ ছাড়ের সুযোগ।
বইমেলা চলবে মাসব্যাপী, যেখানে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পাঠক-দর্শনার্থীরা ঘুরে দেখতে পারবেন। এবারের বইমেলা নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপনের মাধ্যমে একুশের চেতনাকে আরও দৃঢ় করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।