মান্দায় ৮’শ একর জমি রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: বুধবার ২২শে জানুয়ারী ২০২৫ ১২:৪৪ অপরাহ্ন
মান্দায় ৮’শ একর জমি রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

নওগাঁর মান্দা উপজেলার উথরাইল বিল এলাকায় খাস জমি রক্ষা এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন বেহাত হওয়া জমি প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে গণশুনানির মাধ্যমে জমির বিরোধ নিষ্পত্তি ও জমির প্রকৃত মালিক নির্ধারণের কাজ চলছে।  


মঙ্গলবার উথরাইল বিল এলাকায় দুই দিনব্যাপী গণশুনানি শুরু হয়। মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়ার নেতৃত্বে এই শিবির স্থাপন করা হয়। প্রথম দিন ভাঁরশো ইউনিয়নের চারটি মৌজার আড়াই হাজার কৃষক এতে অংশগ্রহণ করেন। জমির প্রকৃত মালিকানা নিশ্চিত করতে কৃষকদের জমি-সংক্রান্ত দলিলপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। যাদের প্রমাণাদি সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে, তাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।  


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অনেকেই খাস সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। এমনকি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি নিয়েও নানা বিরোধ রয়েছে। এসব জমির বিরোধ অফিসে বসে মিটানো সম্ভব নয়। এ জন্য সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রশাসনিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এ গণশুনানি আয়োজন করা হয়েছে।  


পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক নাহিন প্রামাণিক জানান, তাদের ১৪ বিঘা জমি ১২ বছর ধরে অন্যের দখলে ছিল। বাবা বেঁচে থাকাকালে জমি তারা ভোগ করতেন, কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর জমি হারান। গণশুনানিতে অংশ নিয়ে জমির মালিকানা ফিরে পেতে শুরু করেছেন তিনি। শুনানির রায়ে তাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত এসেছে এবং দখলদারদের নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।  


স্থানীয় কৃষক আব্দুল জলিল জানান, বিল এলাকায় জমি নিয়ে প্রতি বছরই সংঘর্ষ ও মামলার ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের এই উদ্যোগ সফল হলে জমির প্রকৃত মালিকরা যেমন তাদের অধিকার ফিরে পাবেন, তেমনি সরকারের খাস সম্পত্তিও রক্ষা হবে।  


জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান, জেলাজুড়ে হাজার হাজার বিঘা খাস জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। এগুলো উদ্ধার করা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। গণশুনানির মাধ্যমে জমির প্রকৃত তথ্য প্রমাণ যাচাই করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।  


গণশুনানিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন জাহান লুনা, মান্দা থানার পরিদর্শক আব্দুল গণি, সেনাবাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন। জমি উদ্ধার ও প্রকৃত মালিকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার এ উদ্যোগ এলাকাবাসীর কাছে প্রশংসিত হয়েছে।  


উপজেলা প্রশাসনের এ ধরনের কার্যক্রমে মানুষ দারুণ সাড়া দিয়েছে। জমি-সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি এবং খাস জমি পুনরুদ্ধারে এমন উদ্যোগ এলাকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।