সরকারি চাকরি আইন বানানোই হয়ছে দুর্নীতি করে সুবিধা নেবার জন্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: বুধবার ২৭শে নভেম্বর ২০২৪ ০৩:৫৫ অপরাহ্ন
সরকারি চাকরি আইন বানানোই হয়ছে দুর্নীতি করে সুবিধা নেবার জন্যে

সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে আইনের ৪১ এবং ৪২ ধারা নিয়ে। দীর্ঘ আলোচনা ও সংশোধনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৮ সালে এই আইনটি চূড়ান্ত করা হয়, কিন্তু আইনের কিছু বিধান নিয়ে এখনো সমালোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আইন দুর্নীতি দমন করার চেয়ে বরং কর্মচারীদের দুর্নীতি করতে উৎসাহিত করবে, যা একটি স্বচ্ছ ও দক্ষ প্রশাসন গঠনে বড় বাধা।  


আইনের ৪১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনকালে কোনো ফৌজদারি মামলা হয়, তবে তাকে গ্রেফতার করার জন্য সরকারের পূর্বানুমতি নিতে হবে। এতে দুর্নীতি বা অন্য যেকোনো অপরাধে অভিযুক্ত কর্মচারীরা দ্রুত গ্রেফতার হতে পারবেন না, যা দুর্নীতির পক্ষে সহায়ক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। উদাহরণস্বরূপ, পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মারামারি বা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার আগে সরকারের অনুমতি প্রয়োজন, যা কার্যকরী তদন্তে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।  


অন্যদিকে, আইনের ৪২ ধারার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, এক বছরের কম কারাদণ্ড হলে সরকারি কর্মচারীর চাকরি বরখাস্ত করা হবে না। অর্থাৎ, যদি একজন কর্মচারী এক বছরের কম সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তবে তার চাকরি অটুট থাকবে এবং তাকে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হতে পারে, যেমন পদোন্নতি স্থগিত বা বেতন বৃদ্ধি বন্ধ করা, তবে চাকরি চলে যাবে না। এর ফলে, ঘুষ বা দুর্নীতির মতো অপরাধে জড়িত কর্মচারীরা মাত্র কয়েক মাসের জেল খেটে পুনরায় চাকরিতে ফিরে আসতে পারেন।  


প্রথমদিকে, ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালায় এমন বিধান ছিল যে, একজন কর্মচারী যদি কোন গুরুতর অপরাধে দোষী হন, তার চাকরি বাতিল করা হবে, তবে বর্তমান আইনে এই বিধানটি তুলে দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আইনের কারণে সরকারি অফিসে দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতা বৃদ্ধি পেতে পারে, কারণ কর্মচারীরা জানেন যে, তাদের অপরাধের জন্য বড় ধরনের শাস্তি বা চাকরি হারানোর ঝুঁকি কম।  


জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, "এই আইন দুর্নীতি দমন করার বদলে দুর্নীতির জন্য আরো সুযোগ সৃষ্টি করবে। যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তাদের চাকরি অব্যাহত থাকবে, যা প্রশাসনের ওপর জনগণের আস্থার সংকট সৃষ্টি করবে।" তিনি আরও বলেন, "যেমন একজন ঘুষখোর কর্মকর্তা এক বছরের বেশি কারাদণ্ড পেলেও চাকরি থেকে বাদ পড়বেন না, এটা আইনের শাসনের পরিপন্থি।"  


এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে কেউ এ বিষয়ে সঠিক মন্তব্য না করলেও, বিষয়টি নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই আইন সংশোধন না হলে তা ভবিষ্যতে সরকারের দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে।