সরাইলে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা ! ধ্বংসের পথে যুবসমাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
মো: তাসলিম উদ্দিন, উপজেলা প্রতিনিধি সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশিত: বুধবার ২৬শে জুন ২০২৪ ০৯:১২ অপরাহ্ন
সরাইলে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা ! ধ্বংসের পথে যুবসমাজ

ইয়াবা বতর্মান সমাজের সবচেয়ে বড় কাঁটা । নেশার উপাদানের মধ্যে মাথাব্যথার বড় কারণ ইয়াবা। তরুণ সমাজের কাছে ইয়াবা সর্বাধিক  জনপ্রিয় এবং পাচারের ক্ষেত্রে তুলনামূলক সহজ। এর কারণ ইয়াবার গঠন। ছোট ট্যাবলেট আকৃতির এই নেশাদ্রব্য যে কোনো স্থানে অধিক পরিমাণ লুকিয়ে রাখা যায়। নেশাগ্রস্তদের কাছে ইয়াবা ‘বাবা’ নামে পরিচিত। ইয়াবার নেশায় আজ শহরসহ গ্রামা ঞ্চলের যুব সমাজ বুঁদ হয়ে রয়েছে। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। 


সরাইল উপজেলা আইন- শৃঙ্খলা সভায় মাদক সহজ ভাবে পাওয়া যাচ্ছে। সরাইলের প্রত্যেকটি মোড়ে  প্রত্যেকটি চা দোকানের আড়ালে মাদক বা ইয়াবা বসে বসে  সুখ টান দিচ্ছে। গাঁজা ফিনসিডিল এখন হাত বাড়াইলে পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা। আইন- শৃঙ্খলা সভায় বক্তারা মাদকের নির্মূলে প্রশাসনের পাশাপাশি সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। আবার শুরু হয়েছে পার্সেল করে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে মাদক। এই পেশায় বেশি যুক্ত হয়েছে  নারীরা। ইয়াবা বহন করার সহজ এবং ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে মাদক সেবীদের হাতে। এখন যদি মাদক থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে না পারে। ধ্বংস হবে সমাজ ব্যবস্থা। এই মাদকের কারণে এলাকায় বেড়েছে চুরি ডাকাতি। 


বক্তারা বলেন, মাদকের টাকা না পেয়ে তারা পরিবারের উপরে আক্রমণ করে। এমন ঘটনা সরাইলে প্রতিদিনই ঘটছে। এ মাদকগুরুত্ব  মাদক হুরদের ও মাদক ব্যবসায়ীদের  বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান পরিচালনা করতে   অনুরোধ জানান।


মাদকাসক্তি হচ্ছে সব অপরাধের মূল। একজন মানুষ যখন অপরাধ জগতে পা বাড়ায়,প্রথম সিঁড়িটি হলো মাদকদ্রব্য। আশির দশকে আমাদের দেশে হেরোইনের আগ্রাসন ঘটে। ওই দশকের শেষ দিকে ফেনসিডিল মাদক রাজ্যের চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ইয়াবার আগমন ঘটে মাদক রাজ্যে। প্রথম দিকে এ আগ্রাসনকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। 


এখন ইয়াবার থাবায় আক্রান্ত দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকা। অভিজাত তরুণ-তরুণীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইয়াবা নেশায় আসক্ত। যেকোনো পরিবার এবং সমাজের জন্য মাদকাসক্ত ব্যক্তি হুমকিস্বরূপ। মাদকাসক্ত ব্যক্তি অন্যায় কাজ করতে দ্বিধা বোধ করে না। তারা সমাজের অনেক ক্ষতি করে থাকে। মাদকাসক্তির কারণেই পারিবারিক অশান্তি,চাঁদাবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি, ডাকাতি ও খুনখারাবির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে; যা সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধিসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।মাদকাসক্তি সংঘটিত অপরাধের একাংশের প্রধান নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। 


পারিবারিক বিপর্যয়গুলো বিশেষজ্ঞদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। এই সর্বনাশ মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রকে মোটেও বিচলিত করে না। তারা কেবলই বোঝে ব্যবসা। তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দিচ্ছে মরণনেশার উপকরণ মাদক। তরতাজা তরুণদের মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে ইয়াবার ভয়াবহ নেশা। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক সুবন্ধন।


 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, ক্ষমতাধর এসব মাদক ব্যবসায়ীরা সবাই অল্পবয়সী। এরা মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত একথা শুনলে কেউ বিশ্বাসও করবে না। কারণ এরা সবাই ভালো পরিবারের সন্তান। প্রতিদিন সকাল বেলা উন্নতমানের পোশাক পরে বাড়ি থেকে বের হয়, আর রাতে বাড়িতে ফেরে। পোশাকধারী এসব যুবকদের পকেটে থাকে ইয়াবা ট্যাবলেট যা প্রকাশ্যে হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে পরিচিত মাদক সেবনকারীদের কাছে। এ কারণে এসব আল্পবয়সী মাদক ব্যবসায়ীরা আসছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে।


এদিকে তথ্য মতো জানা যায়, ঢাকা সিলেট মহাসড়ক কে ব্যবহার করে মাদক পাচারকারীরা। সহজে সরাইল উপজেলা সহ অন্যান্য উপজেলার মাদক পৌঁছে দিচ্ছে।কোন কোন সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও মাদকের বড় সিন্ডিকেট গ্রুপ রয়ে যায় আড়ালে।


খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আশীষ কুমার স্যানাল বলেন,গত কয়েক দিন হয় মাদকসহ একজনে আটকরে মামলা দেওয়া হয়েছে।মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। ওসি বলেন,মাদকের বিরুদ্ধে হাইওয়ে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মা-বাবার চোখের সামনে মাদকাসক্ত হচ্ছে ছেলে। এ কষ্ট কিভাবে মেনে নেবে অভিভাবকরা। তাই মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীরে বাবা-মা। 


স্থানীয়রা বলেন, সরাইল তথা দেশের যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে যুব সমাজ ধংস হবে।চুরি ছিনতাই,খুন অপরাধ বেড়ে যাবে।আর এ জন্য পুলিশকে আরো সক্রিয়ভাবে মাঠে নামতে হবে। এবং অভিয়ান পরিচালনা করে মাদক ব্যাবসায়ীদের গ্রেফতার করে কঠিন বিচারের আওতায় আনতে হবে।


সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেস কর্মকর্তা ডা. মো. নোমান মিয়া বলেন,মাদক গ্রহণের ফলে শারীরিক ও মানসিক দুটো ক্ষতি হয়। শারীরিক ক্ষতির মধ্যে পায়ের নখ থেকে মাথা পর্যন্ত ক্ষতি করে। মাদক গ্রহণে মানসিক সমস্যা যেমন ডিপ্রেশন, অস্থিরতা দেখা যায়। ডা. নোমান বলেন, মাদক গ্রহণের ফলে শারীরিক ও মানসিক দুটো ক্ষতি হয়। শারীরিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে লিভারের সমস্যা, হেপাটাইটিস, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়,জটিল রোগসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে যায়। মাদক গ্রহণ করেন তাদের সংক্রমণের হার বেড়ে যায় । মাদক গ্রহণ করলে মানসিক সমস্যা যেমন ডিপ্রেশন, অস্থিরতা দেখা যায়। দীর্ঘ সময় ইয়াবা সেবনের ফলে ব্রেনের নার্ভ শুকিয়ে যায়। 


সরাইল থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ  এমরানুল ইসলাম বলেন,মাদক নির্মূলে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।মাদক দমনে আমারা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।ইতিমধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো অপরাধিকে ছাড় দেয়া হবেনা।


মাদকদ্রব্য উদ্ধারে মামলা হচ্ছে জানিয়ে ওসি বলেন,সরাইল থানা পুলিশ সর্বদা মাদক বিরোধী অভিযান আছে।


এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) মো. মেজবা উল আলম ভূইঁয়া বলেন,আমি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আশ্বাস দিচ্ছি।মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি।