চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সভাপতি ঢাকাই সিনেমার একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা আহমেদ শরীফ। তাকে ৩৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, আহমদ শরীফ ও তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য এই অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কী অসুখের জন্য স্বামী-স্ত্রী এই অনুদান পেলেন সেটা জানা যায়নি। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তার কাছ থেকে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন আহমেদ শরীফ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে একটি ছবি। এখানে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে চেক গ্রহণ করছেন এই অভিনেতা।
কিন্তু গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বলা যায়, ফেসবুুকে ভাইরাল নামটি এখন ‘আহমেদ শরীফ’। এই অভিনেতার অনুদান পাওয়ায় অনেকেই নানা প্রশ্ন সামনে তুলে আনছেন। সেখানে তার মজবুত অর্থনৈতিক অবস্থান তুলে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি তার গোপন অসুখ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি নিজের রোগ ও চিকিৎসার বিষয়ে কোথাও মুখ খোলেননি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশকিছু কলামও প্রকাশ হয়েছে আহমেদ শরীফকে অনুদান দেয়া প্রসঙ্গে। সেই সব লেখায় একদিকে যেমন আহমেদ শরীফের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা ফুটে উঠেছে তেমনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার নেতিবাচক ধারণার কথাও উঠে এসেছে।
জানা গেছে, আহমেদ শরীফের বড় ভাই বিজিএমই’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। ডেনিম গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আহমেদ শরীফ। উত্তরায় তার হাউজিং ব্যবসা আছে। এমন একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষের কেন প্রধানমন্ত্রীর অনুদান দরকার পড়লো? তবে বিতর্কের বড় কারণটা ‘বঙ্গবন্ধু’ বিষয়ক। বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত আহমেদ শরীফ। বিভিন্ন সময় তিনি জাতির পিতাকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছেন। পাশাপাশি অভিনেতা আহমেদ শরীফের অসুখ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। জানতে চেয়েছেন কী অসুখে তিনি ও তার স্ত্রী ভুগছেন যার চিকিৎসার জন্য ৩৫ লাখ টাকা অনুদান নিতে হলো। জানা গেছে, অনুদান গ্রহণের দিনই তিনি একজন প্রযোজক-পরিচালকের মেয়ের বিয়েতে হাজির হন সস্ত্রীক। তেমন গুরুতর অসুস্থ হলে জমকালো আয়োজন করে বিয়ে খাওয়ার সুযোগ তিনি কী করে সেই প্রশ্ন ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে।
অনেকেই দাবি করছেন, ঠিকমতো খোঁজখবর না নিয়েই কতিপয় অসচেতন মধ্যস্থকারীর সৌজন্যে যার তার হাতে উঠছে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান। এতে সত্যিকারের অসহায় শিল্পীরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও মনে করেন তারা। এদিকে ফেসবুকে জাহিদুল ইসলাম তুষার, সাইয়েদ লুৎফুন নাহারসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি একটি লেখা শেয়ার করেছেন। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ‘সালটা ২০০৩। ওই সময় খুলনা সরকারি মহিলা কলেজে ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতায় যায় ছাত্রদল। ছাত্রদলের অভিষেক অনুষ্ঠানে তৎকালীন সেলিব্রেটি চলচ্চিত্র খল অভিনেতা আহমেদ শরীফকে অতিথি হিসেবে নিয়ে আসা হয়।
অতিথি স্টেজে উঠে তার ভাষণের প্রথম লাইন ছিল ‘মুজিব যদি জাতির পিতা হয় আমি কার সন্তান? ’৭১ এ মুজিব ছিল পাকিস্তানের এয়ারকন্ডিশন ঘরে। উনি ওখানে বসে আপেল ও আঙুর খাইছেন আর আমার নেতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন।’ জ্বি আমি গতকাল প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ৩৫ হাজার লাখ টাকা অনুদান নেয়া আহমেদ শরীফের কথাই বলছি। আমার জানা নেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই মানুষগুলোকে কারা নিয়ে যাচ্ছে এবং কেন নিয়ে যাচ্ছে। মানুষকে সাহায্য করা নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু মানুষরূপি কিছু দাঁতালকে সহায়তা করা কি আমাদের অনেক বেশি প্রয়োজন? আহমেদ শরীফ ঠিক কোন ক্যাটাগরিতে অসহায় হিসাবে প্রমাণিত?
আমার জাতির পিতাকে যে সম্মান দেখাতে পারে না, আমার দেশের স্বাধীনতাকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যে প্রহসনের আশ্রয় নেয়, তার জন্য আমার এক গাল থুতু ছাড়া কোন আবেগই আসে না। আহমেদ শরীফ আপদমস্তক থুতু পাওয়ার মতোই একজন যোগ্য মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে কথা বলা আহমেদ শরীফকে শিল্পী হিসেবে তুলে দেয় সরকারি অনুদান। তাও জাতির জনকের কন্যার হাত দিয়ে। কিছুই বলার নেই। জাস্ট তাকিয়ে দেখা ছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই ! শুধু বলবো গণভবনে নেত্রীর পাশে ওরা কারা? আওয়ামী লীগের, যুবলীগের, ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন, তাদের দেখার কেউ নেই ! আফসোস...!’
তবে অনুদান নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে আহমেদ শরীফের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অনুদান পাওয়ার দিন ১৮ এপ্রিল তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। তখনও তিনি অনুদান প্রাপ্তি ও নিজের অসুখ-চিকিৎসা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। শুধু প্রধানমন্ত্রীর অনুদানই নয়, কট্টর বিএনপিকর্মী আহমেদ শরীফ ২০১৭ সালে অনেকটা গোপনেই সরকারি খরচে পবিত্র হজ পালন করেছেন। এদিকে গব বছরের ২ এপ্রিল চেক জালিয়াতির একটি মামলায় তিন মাসের কারাদণ্ডও হয়েছিল ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় এই অভিনেতার। কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা জরিমানাও করে ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইমান আলী শেখ রায় ঘোষণা করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, আহমেদ শরীফ আট শতাধিক বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। খলনায়ক হিসেবে সফল হলেও অনেক চলচ্চিত্রে ভিন্ন চরিত্রেও অভিনয় করেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্য রয়েছে অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, দেনমোহর (১৯৯৬), তিন কন্যা (১৯৮৫) ও বন্দুক। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি আহমেদ শরীফ টেলিভিশনের জন্য কিছু নাটক-টেলিফিল্ম নির্মাণ করেন। ২০০১ সালে প্রথম নির্মাণ করেন টেলিফিল্ম ‘ক্ষণিক বসন্ত’। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য তিনি নির্মাণ করেন নাটক ‘ফুল ফুটে ফুল ঝরে’। বড় পর্দায় এখন কম দেখা গেলেও ছোট পর্দায় বিভিন্ন নাটকে মাঝে মধ্যেই দেখা মেলে তার।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।