যখন এক সুন্দরী রাজকুমারী ঝুঁকে গিয়ে কোমায় থাকা তার প্রেমিককে চুমু খাওয়ার মাধ্যমে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন তখনই সেই দৃশ্যটি সিনেমার জগতে ইতিহাস সৃষ্টি করে।
১৯৩৩ সালে ‘কর্মা’ ছবিতে সত্যিকার স্বামী-স্ত্রীর (দেবেকা রানী এবং হিমাদ্রি রায়) চরিত্রে অভিনয় বলিউডের ইতিহাসে নতুন এক দৃশ্যের আবির্ভাব ঘটে। বলা হয়ে থাকে বলিউডে এই চুমুটি হলো সর্বপ্রথম চুমু এবং সবচেয়ে দীর্ঘতম চুমু। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা তা নয়।
ওই সময়ের সাংবাদিকরা এ নিয়ে ব্যাপক লেখা লেখি করেন। বলেন, ওই চুমু ছিল চার মিনিট ব্যাপী। এ দৃশ্যের পর ভারতীয় কাপলদের মধ্যে চুমু খাওয়ার মিথ তৈরি হয় বলে জানা যায়।
রায় এবং রানি সর্বপ্রথম ভারতের মুম্বাইয়ে পেশাগত ফিল্ম স্টুডিও স্থাপনের জন্য গিয়েছিলেন। তখন ছিল ১৯৩৪ সাল। সে সময়ে ওই সিনেমাটি ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
ভারতীয় সিনেমা নিয়ে লেখা একটি বই সম্প্রতি দেশটির রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে জাতীয় ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড বেস্ট বুক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। ওই বই দম্পতিদের চুমু খাওয়া তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে।
‘দ্য লংগেস্ট কিস: দ্য লাইফ এন্ড টাইম অব দেবিকা রানির’ বইয়ের লেখক কিশোর দেসাই বলেন, ওই ছবিতে দুজন কাপলের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। রাজ এবং রানী নামের দুজন নারী পুরুষ সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। তারা এক অপরকে খুবই ভালোবাসে। তাই এ জায়গা থেকে যদি একটি আবেগপূর্ণ চুমু ছবির পদায় ফুটিয়ে তোলা যায় তাহলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
ওই লেখিকা আরও বলেন, এটা অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা না। কারণ ওই সময়ে ভারত ব্রিটিশদের অধিনস্ত ছিল। ফলে পশ্চিমাদের নির্মাণ করা অনেক ছবিতে চুম্বনের দৃশ্য ছিল। যেগুলো ১৯২০ এবং ১৯৩০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে। কর্মা ছিল ওসব ছবির অনুকরণীয় একটি ছবি।
ছবিটিকে প্রেমের নাটক হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ৬৩ মিনিটের ছবিটি পরিচালক ছিলেন ব্রিটিশ ছবি নির্মাতা জেএল ফার হান্ট। ছবিটিতে রাজকীয় ধাচ যুক্ত করা হয়েছে।
ছবিটিতে চুমুর দৃশ্যটি মূলত শেষ অংশে দেখানো হয়েছে। যখন একটি কোবরা রাজকুমারকে কামড় দেয়। তখন রাজকুমারি অর্থাৎ নায়িকা তাকে বাঁচানোর জন্য চুমু খায়।
একটি মিথ রয়েছে ওই চুমুর দৈর্ঘ্য ছিল চার মিনিট। তবে এটি সত্য নয়। বইয়ের লেখিকা বলেন, চুমুর দৃশ্য ছিল। কিন্তু সেটাই যে বলিউডে সবচেয়ে লম্বা চুমু তা সত্য নয়। তবে এটি কোনো সাধারণ চুমু ছিল না। যদি আপনি ওই সময়ের অবস্থানকে বুঝতে পারেন। তবে তিনি বলেন ওই চুমুর দৈর্ঘ্য ছিল দুই মিনিট।
চুমুর দৃশ্যের মাধ্যমে ছবিটিকে বিক্রি করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। ছবিটি নিয়ে যে মিথ তৈরি হয়েছে তার মূলত সাংবাদিকদের জন্য।
ভারতে দশকের পর দশক ধরে সিনেমাতে এ ধরনের রগ রগে দৃশ্য দেখানো নিষিদ্ধ ছিল। তবে বর্তমান সময়ে এটি আর নেই।
২০০৭ সালে হলিউড অভিনেতা রিচার্ড গেয়ার দিল্লিতে একটি দাতব্য অনুষ্ঠানে বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেঠিকে চুম্বন করার পরে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রতিবাদকারীরা অভিনেতার কুশপুত্তলিকা পোড়ান, দাবি করেন যে তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির অবমাননা করেছেন।
কয়েক বছর পর অন্য একটি ঘটনায় দিল্লির এক যুবক বিবাহিত দম্পতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার জন্য অশ্লীলতার অভিযোগ আনে।
ভারতের ফিল্ম সেন্সরও কয়েক বছর আগে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোর প্রতি খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখত। কোনো ধরনের স্পর্শকাতর দৃশ্য তারা ফেলে দিত। কিন্তু সেখানে অনেক বছর আগে ‘কর্মা’ নামের একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। এটিও মূলত মানুষের মাঝে নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।